রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। বছরে দুটি ঈদ উদযাপন করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। যে কারণে অনেকেই ঈদের নামাজের নিয়ত, নিয়ম এবং তাকবির ভুলে যান।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম, তাকবির, দোয়া সম্পর্কে- ঈদের নামাজের নিয়ত
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি- আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- আল্লাহু আকবার।
এবার জেনে নেওয়া যাক ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম-
১. ঈমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত বাঁধা।
২. তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়া-
‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
৩. এরপর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।
৪. এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা।
৫. প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।
৬. তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
৭. আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া
৮. সুরা ফাতেহা পড়া
৯. সুরা মিলানো। এরপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
১. বিসমিল্লাহ পড়া
২. সুরা ফাতেহা পড়া
৩. সুরা মিলানো।
৪. সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।
৫. প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।
৬. তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
৭. এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৮. সেজদা আদায় করা।
৯. বৈঠকে বসা; তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
১০. নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়া-
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
১১. নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুটি খুতবা দেওয়া।
ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবেন। অবশ্য অনেকেই খুতবা না দেওয়ার ব্যাপারে শিথিলতার কথা বলেছেন। খুতবা না দিলেও ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন।
অতিরিক্ত তাকবির অতিরিক্ত তাকবিরের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাজহাবসহ অনেকেই প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমাসহ ৭ তাকবির আর দ্বিতীয় রাকাআতে ৫ তাকবিরে দিয়ে থাকেন। যদি কেউ অতিরিক্ত ৬ তাকবির দেয় কিংবা অতিরিক্ত ১১ তাকবির দেয় তাতে নামাজের অসুবিধা হবে না বরং নামাজ হয়ে যাবে।
ঈদের নামাজে তাকবির পড়া ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে অর্থাৎ ৩০ রমজান ইফতারের পর প্রথম কাজই হচ্ছে তাকবির তথা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তাকবির পড়া। এটিই ঈদের প্রথম কাজ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমেও তাকবির পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘আর তোমাদের আল্লাহতাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো।’( সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
তাকবির হলো-
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
ঈদের নামাজে পর কিছু দিক-নির্দেশনা- ১. ঈদের সময় মুসলমানদের মাঝে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় মুস্তাহাব। ২. ঈদে আনন্দিত হওয়া এবং আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও মুসলিম ভাইবোনদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ও মুস্তাহাব।
৩. ঈদ একটি সুযোগ, যা আত্মীয়তা-সম্পর্ক জোড়া লাগানো এবং যাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে তাদের মিলিয়ে দেয়ার সর্বোত্তম সময়।
ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবার ও কাপড় চোপড় ও বৈধ বিনোদনের ব্যবস্থা করা জায়েজ। ঈদ হলো খুশি-আনন্দের উপলক্ষ। আল্লাহতায়ালা আনন্দ প্রকাশকে নিষিদ্ধ করেননি। আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে বলেছেন-
( قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ )
বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম। সূরা ইউনুস:৫৮
মন্তব্য করুন