রমজানের একটি গুরুত্বপুর্ণ আমল হলো ইতিকাফ । আর শেষ দশকে ইতিকাফ আরো বেশী ফজিলতময়। মূলত শবেকদর লাভ ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি শুধু ২৭ রমজান অথবা শেষ তিন দিন ইতিকাফ করে কেউ তবে সুন্নত আদায় হবে? কিংবা কখন ইতিকাফ কররে বেশী সওয়াব পাওয়া যাবে।
শবে কদর সম্পর্কে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বিতর্কমুক্ত অভিমত হলো- শবেকদর শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কারও জন্য ইবাদত করা সম্ভব না হলে ২৭তম রাতে কিছুতেই উদাসীন থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে ওই দিন মাগরিব ও এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সে-ও শবেকদরের ফজিলত পেয়ে যাবে।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
হজরত শুবা (রহ.) বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) শবেকদরের রাতে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তা সম্পর্কে অবগত আছি। (আর তা হলো ২৭তম রাত) কেননা রাসুল (সা.) এ রাতে আমাদের নামাজে দাঁড়াতে আদেশ করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৬২)
আমাদের দেশের অনেক এলাকায় দেখা যায়, তারা রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ না করে শুধু ২৭ তারিখে ইতিকাফ করে থাকে। এমনকি অনেক এলাকায় ২৭ তারিখের ইতিকাফ জরুরিও মনে করে। নফলের নিয়তে জরুরি মনে না করে ২৭ তারিখ বা অন্যকোনো দিনে ইতিকাফ করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। অবশ্য শুধু ২৭ তারিখে ইতিকাফকে জরুরি মনে করার অবকাশ নেই।
ইতিকাফের দিনগুলোতে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়াও সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা ও অন্যান্য নফলগুলোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কারণ, এ মাসে নফল ফরজের সমতুল্য।
ইতিকাফ অবস্থায় অবসর সময়গুলোতে নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ পাঠ করবেন ও কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করবেন।
এবাদত করে ক্লান্ত হয়ে গেলে কিছু সময় বিশ্রাম করা যেতে পারে। ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রাভাব নিয়ে এবাদত করবেন না। বরং কিছু সময় বিশ্রাম ও আরাম করে উদ্যম এবং একাগ্রচিত্তে এবাদতে নিমগ্ন থাকাটাই ভালো।
লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক ইতিকাফকারীকে ২১ তারিখের রাত থেকে ২৯ তারিখ রাত পর্যন্ত প্রত্যেক বেজোড় রাতগুলো কাজে লাগানো উচিত। যদি পুরো রাত জাগ্রত থাকা সম্ভব না হয় তা হলে অধিকাংশ সময়ই জাগ্রত থাকা উচিত।
অনেক ২৭ রমজানের রাতের পর ইবাদতের প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। এটা মারাত্মক ভুল। কেননা লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনা ২৯ তারিখেও আছে। এ ছাড়া রমজানের এক একটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান।
হাদিস শরিফে রমজানের শেষ দিনগুলোতে এবং শেষ রাতগুলোতে অধিক ক্ষমার সুসংবাদ এসেছে। এ কারণে শাওয়ালের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত পূর্ণ ধৈর্য ও সবরের সঙ্গে এবাদতে মগ্ন থাকা উচিত। ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি, চার কুলসহ অন্যান্য তাসবিহ-তাহলিল আদায় করা।
ইতিকাফের দিনগুলোর গুরুত্ব বুঝে সে দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে দুনিয়াবি সব ব্যস্ততা থেকে নিজেকে অবসর করে ইবাদতে নিমগ্ন হতে হবে। বিশেষত মোবাইল থেকে যথাসাধ্য নিজেকে দূরে রাখা।
মন্তব্য করুন