তাবলিগ জামাতের চলমান বিরোধে উভয়পক্ষই সত্যের ওপর রয়েছে বলে মন্তব্য করে সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি ‘আমিরুল হিন্দ’ আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের খতমে বুখারি অনুষ্ঠানে আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের, উভয়পক্ষই সত্যের ওপর রয়েছেন। আমাদের উচিত কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না করা।
সায়্যিদ আরশাদ মাদানী বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ভ্রান্ত বলে অভিশাপ দেয়, তার ব্যাপারে আল্লাহর নবির বক্তব্য হলো- ‘ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে পথভ্রষ্ট না হলে বা অভিশাপের উপযুক্ত না হলে অভিশাপদাতার ওপরেই তা পতিত হয়।’
তিনি বলেন, অতএব কেউ কাউকে কাফের বা ফাসেক বলে নিজের ইমান ও আখেরাতকে ধ্বংস করতে যাবেন না। যারা এতদিন এসব করেছেন তারা তওবা করুন। সবাই মুসলমান, সবাই নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন, মুমিন-মুত্তাকি।
তাবলিগের উভয়পক্ষের সঙ্গে দেওবন্দের সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাবলিগের দু’পক্ষই আমাদের কাছে আসে, কথা বলে, আমরা শুনি। আমাদের দাওয়াত করে, আমরা যাই, তাদেরও আমরা দাওয়াত করি। আমাদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। দু’পক্ষ একই মেহনত করে। দু’পক্ষের জামাতই আল্লাহর রাস্তায় বের হয়। তাই আমরা বলি, কোনো একপক্ষকে ভালোবাসার কারণে অপরপক্ষকে কাফের বলা, পথভ্রষ্ট বলা ভয়াবহ গুনাহ। এতে করে অন্যপক্ষ কাফের হবে না বরং আপনার ইমানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মাওলানা মাদানী আরও বলেন, যে ভুলভ্রান্তি হয়েছে সে ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে ফতোয়া চাওয়া হয়েছিল। আমরা ফতোয়া দিয়ে দিয়েছি। তিনি (মাওলানা সাদ) নিজের যেসব ভুল বা যে বিষয়গুলোকে সঠিক মনে করতেন অথচ বাস্তবে সেগুলো সঠিক ছিল না- এসব বিষয়ে তিনি (মাওলানা সাদ) যখন বক্তব্যগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তখন সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
উভয়পক্ষকে সতর্ক করে দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিস বলেন, কেউ দুনিয়ার স্বার্থে আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না। অত্যন্ত আফসোসের সঙ্গে বলতে হচ্ছে- তাবলিগের বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে একপক্ষকে কাফের বলা, খুন-খারাবি করা নিজেদের ধ্বংস ছাড়া আর কোনো পরিণতি বয়ে আনবে না।
তিনি আরও বলেন, এমন মতবিরোধ দারুল উলুম দেওবন্দেও হয়েছে। ফলে আরেকটি দেওবন্দ সৃষ্টি হয়েছে। মাজাহিরুল উলুমেও হয়েছে। এমনিভাবে অনেক মাদ্রাসায় মতবিরোধের কারণে নতুন নতুন মাদ্রাসা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় একটিকে সঠিক ধরে নিয়ে অন্যগুলোকে কাফের-পথভ্রষ্ট বলা নিছক মূর্খতা ছাড়া আর কিছু না।
উল্লেখ্য, ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন এই তাবলিগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালে। এরপর কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী'র উপস্থিতিতে তাবলিগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয়। এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকেই তাবলিগ জামাতের দু’দলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
মন্তব্য করুন