কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যেসব কারণে আয়-রোজগারে বরকত কমে যায়

যেসব কারণে আয়-রোজগারে বরকত কমে যায় । ছবিঃ সংগৃহীত
যেসব কারণে আয়-রোজগারে বরকত কমে যায় । ছবিঃ সংগৃহীত

অনেকেরই আয়-রোজগার ভালো হওয়া সত্ত্বেও অভাব দূর হয় না। সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। দিনরাত পরিশ্রম করেও আর্থিক সচ্ছলতা মেলে না। মনে হয়, কোথায় যেন কী নেই; আর তা হলো—বরকত।

যেসব কারণে আয়-রোজগারে বরকত কমে যায়

বরকত মহান আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত বিষয়। এটা অর্জন করতে হয় বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে। মালে, সম্পদে বরকত দিলে অল্পও অনেক হয়, আর বরকত না হলে কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদ দিয়েও অভাব দূর হয় না। যেসব কাজে সম্পদের বরকত নষ্ট হয়—

# পাপাচারে লিপ্ত হওয়া

পাপাচারে লিপ্ত হলে জীবিকায় বরকত চলে যায়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ইমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত; তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বরকত (কল্যাণ ও প্রাচুর্য) উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি।’—সুরা আরাফ : ৯৬

# প্রতারণা ও ধোঁকা দেওয়া

মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে এবং তাদের ধোঁকা দিলে সম্পদের বরকত চলে যায়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন কিংবা বাতিলের)। যদি তারা সত্য বলে এবং (পণ্যের) অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং (পণ্যের) দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।’—সহিহ বোখারি : ২০৭৯

# সুদের আদান-প্রদান

সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষ সুদ গ্রহণ করে। অথচ সুদের আদান-প্রদানে জীবিকার বরকত দূর হয়ে যায়। মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিঃশেষ করেন ও সদকায় প্রবৃদ্ধি দান করেন...।’ –সুরা বাকারা : ২৭৬

# নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় না করা

আল্লাহতায়ালা তার অশেষ নিয়ামত দ্বারা আমাদের ঘিরে রেখেছেন। রিজিক তার অন্যতম নিয়ামত। এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে বরকত ও কল্যাণ লাভ করা যায় না। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’—সুরা ইবরাহিম : ৭

# কৃপণতা করা

কৃপণতা মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করে, যা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে। তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’—সুনানে আবু দাউদ : ১৬৯৮

# প্রাপ্ত রিজিক ও তাকদিরে সন্তুষ্ট না থাকা

মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য রিজিক বণ্টন করে দিয়েছেন। মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে তার জীবিকায় বরকত লাভ হয়। পক্ষান্তরে, ওই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট না হলে জীবিকার বরকত চলে যায়। এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বান্দাকে প্রদত্ত জিনিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তাতে যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন এবং তাকে বৃদ্ধি করে দেন। আর যদি সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে তাতে বরকত দেন না।’ –মুসনাদে আহমাদ : ২০২৭৯

# অপচয় ও অপব্যয়

বাজে কাজে ও অপ্রয়োজনে খরচ অপব্যয়। এটা মানুষের নিন্দনীয় স্বভাব, যার কারণে তার মধ্যে চৌর্যবৃত্তি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, উৎকোচ গ্রহণ ইত্যাদি দুশ্চরিত্র স্বভাব বিস্তার করে। এ জন্য ইসলাম এগুলো নিষিদ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ –সুরা আরাফ : ৩১

# অন্যায় পথে সম্পদ অর্জন করা

হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জন করলে তার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, সে এমন ব্যক্তির মতো যে আহার করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না।’ –সহিহ মুসলিম : ১০৫২

# জাকাত না দেওয়া

জাকাত আদায় ফরজ। জানা সত্ত্বেও অনেকে তা আদায় করে না। ফলে ইহকালীন ও পরকালীন আজাব-গজব আপতিত হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত, তাহলে আর কখনো বৃষ্টি হতো না।’ –ইবনে মাজা : ৪০১৯

# অধিক কসম খাওয়া

সাধারণত মানুষ নিজের কথাকে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত করে তোলার জন্য কসম খেয়ে থাকে। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে অধিক কসম খাওয়া উচিত নয়। মিথ্যা কসম খাওয়া বড় ধরনের পাপ, যার কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কেননা নিশ্চয়ই তাতে (মিথ্যা কসমে) বিক্রি বেশি হয় কিন্তু পরে (বরকত) ধ্বংস করে।’—সহিহ মুসলিম : ২৭৯৩

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় ফিরলেন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীরা

দুই দফা না মানলে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারী বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের

জলোৎসবে সাঙ্গ রাঙামাটিতে বৈসাবি উৎসব

ঢাকায় আ.লীগ ও ছাত্রলীগের আরও ৬ নেতা গ্রেপ্তার

জেলখানায় ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ পেলেন বন্দিরা 

সরকারকে জনগণের মনের ভাষা বুঝতে হবে : ফারুক

আগুনে পুড়ল ১৫ দোকান

আগামী নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা 

১৮০০ পিস ইয়াবাসহ জামাই-শ্বশুর ধরা

১০

নিখোঁজ পিকআপ চালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

১১

জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ না করার আহ্বান নাহিদের 

১২

‘ভারত হাসিনাকে জায়গা দিয়ে নিজেকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে’

১৩

‘দেশের জন্য কাজ করছেন নাকি আ.লীগ পুনর্বাসন করছেন’

১৪

এবার রেলিগেশনের স্বাদ পেলেন এমবাপ্পে

১৫

শীতলক্ষ্যায় নৌকাডুবি, নিখোঁজ পরীক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

১৬

বাঁশের মাচাল বানানো কেন্দ্র করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

১৭

মেয়ের হবু বর নিয়ে পালানো নারী বললেন, আমরা একসঙ্গেই থাকব

১৮

‘ট্রাম্প-শি-মোদি ধাক্কা দিয়ে কিছু করে যাবে না, আমাদের করতে হবে’

১৯

বিশ্রাম পাচ্ছেন না মেসি, খেলবেন মায়ামির পরবর্তী ম্যাচেও

২০
X