পবিত্র মাহে রমজান মাস ইবাদতের মাস। এ মাসে কোনো ইবাদত করলে তার সত্তরগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাস এলেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজের কর্মব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে বেশি বেশি ইবাদত করার চেষ্টা করেন। পবিত্র মাহে রমজান মাসে অবশ্যই তিনটি আমল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
ফরজ ও নফল নামাজ পুরো বছরের নিয়মিত আমল হলেও রমজানে এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। অনেকে পুরো বছরে কখনো কখনো নামাজ আদায়ে গড়িমসি করলেও রমজানে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার কাজগুলোর মধ্যে নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যদি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে, তবে সে নাজাত পাবে এবং সফলকাম হবে। যদি নামাজ নষ্ট হয়ে থাকে, তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (নাসায়ি শরিফ)
রমজানে নামাজ পড়লেও অনেকে জামাতে নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেন না। অথচ জামাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব অন্য যেকোনো আমলের তুলনায় বেশি। জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৬৪৫; মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৬৪০)
অযথাই অবহেলা করে জামাতে নামাজ আদায় না করা ব্যক্তির জন্য রাসূল (সা.) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন— আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর কসম করে বলছি! অবশ্যই আমি সংকল্প করেছি, আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেব, তারপর আমি নামাজের হুকুম দেব এবং এ জন্য আজান দেওয়া হবে, তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করব সে লোকদের নামাজ পড়াবে। এরপর আমি ওই লোকদের দিকে যাব, যারা জামাতে হাজির হয়নি। এবং তাদের বাড়িঘর তাদের সামনেই জ্বালিয়ে দেব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪২০)
কোরআন তিলাওয়াত :
রমজানের প্রাণ হলো পবিত্র আল কোরআন। এই মাসেই কোরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে। রাসূল (সা.) নিজেও এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। অন্তত প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা বা কিছু সময় হলেও কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত।
প্রতি রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও জিবরাইল (আ.) পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাকে বলেছে, প্রতি রমজানে জিবরাইল (আ.)-কে একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দু’বার কোরআন শোনান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৫)
তারাবি, নফল, সুন্নত নামাজ ও ইবাদত :
রমজানের বিশেষ ইবাদত রাতের তারাবি নামাজ। এশার নামাজের পর এই নামাজ আদায় করা হয়। তারাবির সঙ্গে অন্যান্য নফল, সুন্নত নামাজ ও ইবাদতগুলোও নিয়মিত আদায় করা উচিত।
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ২০৪৭)
তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তার জীবনের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত শরিফ, হাদিস : ১৮৬২)
মন্তব্য করুন