শবেবরাত হলো ক্ষমার রজনী। এ রাতে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে ক্ষমা করেন। গুনাহ মাফ করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবেবরাত)। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন।
তবে এ রাতেও আল্লাহ তায়ালা দুই শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করেন না। তারা হলেন- অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ও মুশরিক ব্যক্তি।
বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ অর্ধ-শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান ৫৬৬৫)
মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন শিরককারীকে। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা সবচেয়ে বড় গুনাহ। তিনি শিরকের গোনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। তবে কেউ যদি তওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসেন তার ক্ষমা হতে পারে। মহান আল্লাহ শিরকের গোনাহের পরিণতি সম্পর্কে ঘোষণা করেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে লোক আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করে; সে যেন অপবাদ আরোপ করে। (সুরা নিসা ৪৮)
হিংসা একটি ভয়ংকর মন্দ স্বভাব। যার ফলে আমাদের অনেক নেক আমল; ভালো কাজ, নেকি ও পুণ্য নষ্ট হয়ে যায়। হিংসা বা অহংকার মানুষের পতন ঘটায়।
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হিংসা থেকে সাবধান! কেননা হিংসা নেকিকে এমনভাবে ধ্বংস করে; যেমন আগুন লাকড়ি ধ্বংস করে। (আবু দাউদ ৪৯০৩)
সাহাবি হজরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তোমাদের পূর্বেকার উম্মতের একটি রোগ তোমাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। তা হলো- পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা। আর এ রোগ মুণ্ডন করে দেয়। আমি বলছি না যে, চুল মুণ্ডন করে দেয়। বরং, এটা দীনকে মুণ্ডন (ধ্বংস) করে দেয়। ঐ মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তোমরা যদি একে অপরকে না ভালোবাসো, তবে ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে বলবো না যে, পারস্পরিক ভালোবাসা কোন্ কাজের মাধ্যমে মজবুত হয়? তোমরা পরস্পর সালামের বিস্তার ঘটাও। (সুনানে তিরমিজি : ২৫১০)
তবে আল্লাহ অতি দয়াশীল ও ক্ষমাপারায়ণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বারবার নিজেকে ক্ষমাশীল বলেছেন। আর শুধু শবেবরাত না। প্রতি রাতেই মহান আল্লাহ অপেক্ষা করেন তার কোন বান্দা তার কাছে ক্ষমা চায়, তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।
মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহ প্রতি রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসে যখন রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রম হয়। আর বলেন, আমি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক। এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকে যার ডাকে আমি সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? (সহিহ বুখারি)
মন্তব্য করুন