আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ও সরকার পতনের পর থেকে দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে, ধর্মীয় উপসনালয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, হত্যা, জখম, শ্লীলতাহানি, নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র (ডুজা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রবীর রঞ্জন হালদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন সাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় (এমকে রায়)।
ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় তার বক্তব্যে বলেন, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব অপ্রীতিকর ঘটনার প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ে বিগত ১৮ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু কি পেলাম আমরা?
তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণে দেখা যায় কোনো কিছু হলেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও, জমি দখলের মতো হামলা-আক্রমণ করা হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় সব ক্ষমতাসীন দলই নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর বর্তমানে এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকবে। সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত একটিই- উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
মুক্তিযুদ্ধেরও লক্ষ্য ছিল- একটি শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ। এ সুযোগ যেন বিনষ্ট না হয় এ ব্যাপারে আমাদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।
এ সময় তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ কামনায় ৮ দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো- দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে, ধর্মীয় উপসনালয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, হত্যা, জখম, মা-বোনদের শ্লীলতাহানি, নির্যাতনের ঘটনায় এ পর্যন্ত আহত-নিহত পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী পরিবারদের যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ সরকারি অর্থায়নে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ওই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে; ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধকল্পে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে; শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজায় বাড়তি ২ দিন (যথা: অষ্টমী, নবমী) যোগ করে মোট ৩ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করতে হবে; সব বেদখলকৃত মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, সব উদ্ধারকৃত প্রাচীন দেববিগ্রহ পূর্জা-অর্চনার জন্য স্ব স্ব এলাকার মন্দিরে পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের অসংগতি দূর করে প্রকৃত মালিক বা ওয়ারিশদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এছাড়া, সারা দেশে ৬৪ জেলায় মডেল মন্দিরসহ সনাতনী কৃষ্টি, সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ এবং সনাতন ধর্মীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য উচ্চ শিক্ষার নিমিত্তে একটি বৈদিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে; সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতনী হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় উপাসনালয় এবং সব সরকারি-বেসরকারি আবাসন প্রকল্পগুলো বসবাসকারী সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য মন্দির ও শ্মশান স্থাপন করতে হবে এবং হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত, সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের মহাপবিত্র রথ যাত্রায় ১ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রেসিডিয়াম সদস্য পরিতোষ রায়, সিনিয়র সহসভাপতি মিঠু রঞ্জন দেব, সহসভাপতি তারক চন্দ্র রায়, মন্তোষ সুতার, সঞ্জয় রায় চৌধুরী, তাপস কুমার মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ হালদার, গঙ্গা চৌহান, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাস, আইনবিষয়ক সম্পাদক উদয় কুমার বসাক, সহ-আইন সম্পাদক মৃণাল মজুমদার, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক রিপন দে এবং তথ্য সম্পাদক সঞ্জয় হালদারসহ অনেকে।
মন্তব্য করুন