সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে রাজধানী জুড়ে নানা বণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রা। এদিন বিকেল ৩টায় রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে এ রথযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
রোববার (৭ জুলাই) রাজধানীর স্বামীবাগে ইসকনের প্রধান কার্যালয়ে বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের শুরু হয়। এদিন সকাল ৮টায় ঢাকার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভবনামৃত সংঘের (ইসকন) স্বামীবাগের প্রধান কার্যালয়ে অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা।
এ সময় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্যদিয়ে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনা করা হয়। এরপর দুপুরে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা-০৬ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ পাল।
রথযাত্রা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি কমিশনার পবন কুমার তুলসীদাস বাধে। এসময় বক্তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলের প্রতি আহ্বান করেন অতিথিরা।
এদিন বিকেল ৩টায় রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে এ রথযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। উল্টো রথযাত্রা আগামী ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে এসে শেষ হবে।
বর্ণিল সাজ ও বাদ্যযন্ত্রের তালে রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে রথ নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকেশ্বরীর মন্দিরে আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এদিন বেলা ২টার পর থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সাজে আসতে শুরু করে ইসকন মন্দির প্রাঙ্গণে। বেলা ৩টার পর শুরু হয় রথের দড়ি টানা। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে গেয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের উদ্দেশে শুরু হয় যাত্রা। রথযাত্রায় হাজারো ভক্তের ঢল দেখা গেছে। রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রথযাত্রা বিভিন্ন নামে পরিচিত। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার প্রচলন হয়। বাংলাদেশেও রথযাত্রা হিন্দুদের একটি পবিত্র উৎসব। ঢাকার ধামরাইয়ে এটি পরিচিত যশোমাধবের রথযাত্রা নামে। গাজীপুরের জয়দেবপুরে মাণিক্যমাধবের রথযাত্রা। ভারতের ওড়িষ্যা রাজ্যের যশোমাধবের রথযাত্রা ও মহেশের জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাও উপমহাদেশ বিখ্যাত। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে রথযাত্রার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও দেশের বিভিন্ন মন্দিরেও রথটান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
মন্তব্য করুন