বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান প্রেস ক্লাবে ‘মৌলবাদের উত্থান: প্রভাব, চ্যালেঞ্জ এবং হুমকি’বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রোববার (২৩ জুন) অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা।
তারা বলেন, ‘মৌলবাদীরা হচ্ছে জনসংখ্যার সেই অংশ যারা আক্রমণাত্মকভাবে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিজস্ব ধর্মীয় অনুশাসন বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করে। যার যার অবস্থান থেকে অবশ্যই যে কোনো ধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলতে হবে। বিশেষ করে ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে। কারণ ধর্মীয় উগ্রতা খুব সংবেদনশীল এবং এর অপব্যবহার করে খুব দ্রুত উগ্র জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিতে পারে।
বক্তারা এ ধরনের মৌলবাদী-উগ্রতা অতীতে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে গণহত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের নৃশংসতার জন্ম দিয়েছে বলে মতামত প্রকাশ করেন। বেলজিয়ামভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল সলিডারিটি ফর পিস এবং সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ইউরোপভিত্তিক সংগঠন, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ইবিএফই যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি ড. আনসার আহমদ উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ডাচ পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য হ্যারি ফান বোমেল, ডাচ পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য নিলস ফান ডেন বের্গ, ব্রাসেলসের ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কোঅপারেশনের পরিচালক প্রফেসর ড. তাজিন মুর্শিদ, বেলজিয়ামস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি মিশনপ্রধান প্রীতি রহমান, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী রতন।
এ ছাড়া ডব্লিউ জেড বি বার্লিন সোশ্যাল সায়েন্স সেন্টার ও জার্মানির পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো ড. টমাসো ভার্জিলি, ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, বাংলাদেশ থেকে আগত ‘আমরা একাত্তরের’ প্রদীপ কুমার দত্ত, বেলজিয়ামের ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল ফর পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড কমিউনিটি ডায়ালগের সভাপতি অ্যান্ডি ভারমাউট, গ্লোবাল সলিডারিটি ফর পিসের চেয়ারম্যান এম এম মুর্শেদ, ইন্টারন্যাশনাল হিউমান রাইটস কমিশন সুইজারল্যান্ডের সভাপতি খলিলুর রহমান মামুন, নেদারল্যান্ডস ইবিএফের প্রেসিডেন্ট বিকাশ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন তানিম চৌধুরী।
বক্তারা আরও বলেন, উগ্র মৌলবাদীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় আইনের ব্যাখ্যা কঠোরভাবে মেনে চলার দাবি করে। তাদের ব্যাখ্যা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে এবং কখনও কখনও দেশের সংবিধানের সঙ্গেও মেলে না। যে আদর্শের জন্য আমাদের শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে লড়াই করেছিলেন, সেই আদর্শের ভিত্তিতে একটি আধুনিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দেশের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে তারা উল্লেখ করেন। সিনিয়র ডাচ রাজনীতিবিদ হ্যারি ভ্যান বোমেল পাকিস্তানে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ৯/১১ হামলার কারণগুলি শুধু আল-কায়েদা ও আফগানিস্তানের তালেবানদের দিকে তাকালে বোঝা যাবে না। পাকিস্তানে ইসলামী মৌলবাদের উত্থান এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল কারণ বলে তিনি মনে করেন।
প্রবীণ ডাচ সংসদ সদস্য হ্যারি ফান বোমেল পরামর্শ দিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের উপর আরও চাপ দেওয়া দরকার। নানা কারণে পাকিস্তানের মুক্ত বিশ্বের প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক পাকিস্তান বিশ্বের জন্য আরও নিরাপদ ও ভালো স্থান হতে পারত। ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, জামায়াতের শক্তিশালী মিত্র রয়েছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা, ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) জামাতকে অর্থায়ন ও নানা সহায়তা করে থাকে এবং এক সময় তা সম্ভব হয়েছে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায়।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন