বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপের সেকশন কাঠার মোসাম্মৎ সুফিয়া খাতুন ২০২২ সালে আমেরিকা ও কানাডা ভ্রমণের জন্য ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে কানাডা গমন করেন। পরে ছুটির মেয়াদ শেষ হলে অফিস থেকে বার বার কর্মস্থলে যোগদানের নোটিশ দেওয়ার পর অদ্যাবধি কর্মস্থলে যোগদান না করে বরং মিথ্যা অসুস্থতার আবেদন করে সরকারি ছুটির সময় বৃদ্ধির আবেদন করছেন।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার জন্য অফিস থেকে ৬৩৪ নম্বর স্মারকে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুফিয়া খাতুন ভিজিট ভিসায় যাওয়ার জন্য আরেকজনকে স্বামী পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে কানাডা গমন করেন। যেখানে প্রথমে টরেন্টে উঠেন। সেখান থেকে পরবর্তীতে এসাইলাম নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে দুজন বাংলাদেশি সোহেল হায়দার ও মো. মাসুম নামীয় প্রবাসীদের সঙ্গে পরিচয় হয়, কানাডায় তাদের সাহায্য চান এবং পরিচয় সূত্রে তাদের সাহায্যে কানাডায় থাকার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য তাদের সাহায্য কামনা করেন।
বাংলাদেশি ভেবে বাঙালি মহিলাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসা দুজন বিদেশি বাঙালি তাকে সাহায্য করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেন পরবর্তীতে বব ডিনার নামের রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেল হায়দার নিজে সুফিয়া খাতুনের ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করে দেন।
এদিকে সুফিয়া খাতুন ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে নিজেকে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে ফেলেন। নিজে আর্থিক লাভের উদ্দেশ্য একপর্যায়ে মোহাম্মদ মাসুমের নিকট এক লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই তিনি করবেন বলে হুমকি দেন। মহিলা কানাডার প্রভাবশালী মহলে ভুল তথ্য দিয়ে বাংলাদেশি দুজনকে বিপাকে ফেলার জন্য প্রভাবশালী মহলের সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে, তাদের প্ররোচিত করে তুলে এবং বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। পরে দুজন বাংলাদেশিকে বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কানাডা পুলিশের নিকট বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করে করেন। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ধর্যণ অপহরণসহ ভিন্ন রকম মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে কানাডা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেন।
এমতাবস্থায় স্বনামধন্য দুজন প্রবাসী বাংলাদেশি সলিসিটরের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। অন্যদিকে নারীটি যাতে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করা হয় তার জন্য আরও হুমকি দেন।
বাংলাদেশে সরকারি দপ্তরে ছুটি বৃদ্ধির করার জন্য আবেদনের তদবির শুরু করেন। যাতে পরবর্তী এক দেড় বছরের মধ্যে তিনি পিআরএল এ গিয়ে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা লাভ করতে পারেন তার জন্য বিভিন্ন মহলের তদবির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
অন্যদিকে সূত্র জানায়, জিএসবি থেকে মোসাম্মৎ সুফিয়া খাতুনকে তার কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বারবার সরকারি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। বারবারই তিনি অসুস্থতার অজুহাতে সরকারি ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। সরকারি গোপন সূত্রের মাধ্যমে অফিস তার মিথ্যা আবেদনের বিষয়ে জানতে পেরে তার বিরুদ্ধে ৬৩৪ নম্বর স্বারক ২০২৩ অনুযায়ী সরকারি বিধিবালা ১৯৫৯ বিডি লংঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি ছুটি নেওয়া, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে দুই বৎসরের অধিক সময়ের কাল ধরে সরকারি চাকরিতে যোগদান না করার কারণে এবং বিদেশে থাকার আশ্রয় প্রার্থনা করার কারণে দুজন বাংলাদেশি প্রবাসী বাঙালিকে বিপাকে ফেলার কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এই বিষয়ে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ বাংলাদেশের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, সুফিয়া খাতুন সেকশন কাটার। তিনি সরকারি চাকরি বিধিমালা ১৯৫৯ বিধি মোতাবেক ১৫ দিনের বিদেশ ভ্রমণের ছুটি নিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি অফিসকে বিভ্রান্ত করেছেন। এ ছাড়া বারবার তাগদা দেওয়ার পর কর্মস্থলে যোগদান না করার জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতি সচিব কর্মসংস্থান মোহাম্মদ খাইরুল আলম বলেন, এভাবে সরকারি কর্মচারী হইয়া বিদেশের ভ্রমণের নামে ছুটি নিয়ে পরবর্তীতে ওই দেশে থেকে যাওয়া প্রবণতা আমাদের দেশের সুনাম বিনষ্ট করছে। এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকা উচিত।
এ ব্যপারে বিদেশে অবস্থানরত অভিযুক্ত মোসম্মৎ সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে মোবাইলে ফোন করলে কোনো কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন