ফ্রান্সে কৃতি শিক্ষার্থী, উদীয়মান তরুণ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, পেশাগতভাবে যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখা ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা দিয়েছে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ)। এ উপলক্ষে শনিবার বিকেলে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একটি অভিজাত মিলনায়তনে বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী ক্যানসার আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশি ইব্রাহিম হোসেনকে চিকিৎসাদানকারী ও তাকে বাংলাদেশে পৌঁছে দিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে মানবিক ডাক্তার খ্যাতি পাওয়া ডাক্তার ড. ম্যাথিও জামেলুকে বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে সম্মানপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া ফ্রান্সে হৃদরোগ চিকিৎসায় দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ডাক্তার ওয়াহিদুর রহমানকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। ‘বিসিএফ রিইউনিয়ন এবং কৃতি সম্মাননা-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ফ্রান্সে বাংলাদেশি কমিউনিটির সামাজিক কল্যাণের প্রত্যয়ে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স-বিসিএফ। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
অনুষ্ঠানে এ বছর ১৫ জন কৃতী শিক্ষার্থী, অনার্স, মাস্টার্স ও ডক্টরেট সমমানের ডিগ্রি অর্জনকারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তারা হলেন— জান্নাতুল প্রিয়ন্তি, পারশা রহমান, মাজহারুল খান, সাদিয়া চৌধুরী, ইকরামুল কবীর, মোহাম্মদ আকিব ইখতেফার, সাদিকুর রহমান, অমিত কুমার শাহ্, লাজিম মিয়া, বাশারাত মিয়া, মো. অমিত হাসান, ছায়া দাস, তাসপিয়া উদ্দীন এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী উম্মে তাবাস্সুম সারা।
কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এইচ এস হায়দার এবং শহীদুল আলম মানিককে মরণোত্তর ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া সাংবাদিকতায় মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ, (ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর), মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বাবু (সময় টিভি), আকাশ হেলাল (আইনজীবী), ইমরান চৌধুরী (আইনজীবী), দিয়ান আশরাফুল (অফিসার, ফরাসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়), ডাক্তার লাজিম মিয়া, কর্মসংস্থান সহায়তায় বিসিএফ এক্সিকিউটিভ মেম্বার ইমরান হোসেন, ফরাসি ভাষা শিক্ষায় ফ্রেন্স উইথ রিফাত, ফ্রান্সের মাটিতে স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য সফল হওয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন তুলুজ, অ্যাসোসিয়েশন সেকানো বাংলাদেশ (এএসবি), বাংলাদেশি সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসারের জন্য এমদাদুল হক স্বপন ও নজরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেশনাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে 'ওফিওরা' এবং 'আইছা', সামাজিক ও রাষ্ট্রিক অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখায় নয়ন এনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিসিএফ সভাপতি এমডি নুর বলেন, ফ্রান্স দিনে দিনে বাংলাদেশি কমিউনিটির কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসঙ্গে বাংলা মায়ের সন্তানেরা শিক্ষা, কর্ম ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও খেলাধুলায় নিজেদের যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। তাদের পরিচর্যার মাধ্যমে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে তারাই আমাদের জন্মভূমির মর্যাদা আরও প্রতিষ্ঠিত করবে ।
বিসিএফ’র সহসভাপতি ও পোশাক সামগ্রীর প্রতিষ্ঠান বিডি বসের অন্যতম কর্ণধার মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই প্রজন্মের তরুণ-যুবারা ইউরোপীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠছে। তারা যেন বড় হয়ে তাদের নাড়ির কথা তথা বাংলাদেশের কথা ভুলে না যায়।
সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগঠনের স্বীকৃতি পাওয়া ‘অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্ট সলিউশন সংস্থা’র কর্ণধার উবায়দুল্লাহ কয়েছ বলেন, ‘এ ধরনের স্বীকৃতি আমাদের আরও ভালো কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়।’
প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ বিন কাশেম বলেন, এ দেশের সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এই প্রজন্মের সন্তানেরা এ দেশে পড়াশোনা করে, ভালো ফল করে আরও অধিক মাত্রায় এবং সম্মানজনক কাজ করে এ দেশকে যেমন গড়ে তুলবে তেমনি বাংলাদেশের মুখও উজ্জ্বল করবেন।
অনুষ্ঠানে মোটিভেশনাল স্পিচ দেন আওয়াল রহমান এবং ফাতেমা তুজ জোহরা। সাংস্কৃতিক পর্বে গান পরিবেশন করেন সোমা দাস, মৌসুমী চক্রবর্তী, ইমতিয়াজ রনি। বাঁশি বাজিয়ে শোনান নুরুল ইসলাম এবং বিশ্বাস বিনয়। আর নাচ পরিবেশন করেন আদিফা রহমান।
মন্তব্য করুন