কুয়েতে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে যত প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে, তার চেয়েও বেশি মৃত্যু হচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। পরিবারিক কোলাহল ও দুঃশ্চিন্তা করে হৃদরোগে ও স্ট্রোক করে প্রাণ হারিয়েছেন প্রবাসীদের বড় একটি অংশ। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। করোনাকালীন সময়েও হৃদরোগ ও স্ট্রোকে অনেক প্রবাসীর মৃত্যু হয়।
কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, ৩ বছরে ৯৯৬ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ এই ৩ বছরে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ২৭ জন প্রবাসী মারা গেছেন।
২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত একবছরে কুয়েত বিভিন্ন কারণে ২৭৯ জন প্রবাসী মারা গেছেন। এদের মধ্যে শুধু হৃদরোগে মারা গেছেন আনুমানিক ২৫১ জন। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে কুয়েতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান ১০৩ জন বাংলাদেশি। বাকিরা আত্মহত্যা, হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থাৎ ২০২৩ সালের কালবেলার অনুসন্ধানে উঠে আসে গড়ে প্রতি মাসে ২৩ জনেরও বেশি প্রবাসী মারা যান কুয়েত।
তবে প্রবাসীদের হৃদরোগের কারণ ও এ থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করা যেতে পারে, এসব বিষয় নিয়ে কুয়েত আব্বাসিয়া এলাকার কর্মরত রয়েল সিটি ক্লিনিক প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক নাজমা তালুকদার কালবেলাকে বলেন, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা, যে কোনো রোগীর প্রথম দিকে ডাক্তারের কাছে আসে না। একপর্যায়ে এসে বলেছেন তারা বিভিন্ন সমস্যার নিয়ে বুকে ব্যথা অনুভব করছে আমরা টেস্ট করে নিশ্চিত হলাম, কারও হার্টের সমস্যা আবার অনেকে ডায়াবেটিস, প্রেসার ও এজমা রোগে ভুগছেন। তিনি বলেন, এ সবের মূল কারণই ছিল দুশ্চিন্তা বেশি করা।
ডাক্তার নাজমা স্বাস্থ্য সচেতনতার নানাদিক উল্লেখ করে বলেন, প্রতি বছর সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ হার্টঅ্যাটাক বা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় মারা যান। হার্ট যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয় তবে নানা সংকেত দিয়ে আমাদের জানান দেয়।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় আমরা সাধারণ কোনো রোগ ভেবে তা উপেক্ষা করি। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ব্যায়াম, ভালো ঘুম ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। যেগুলো আপনাকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করবে।
কুয়েতে গত ৩ বছরের মৃত্যুর মোট ৯৯৬ সংখ্যার অনুপাতে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩৩২ জন, মাসে গড়ে ২৫ থেকে ২৭ জনেরও বেশি প্রবাসী মৃত্যু হয়েছে।
মন্তব্য করুন