ইউরোপের দেশ ইতালিতে আগামী ৩ বছরে ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক আমদানির ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। পর্যায়ক্রমে চলতি বছরে ১ লাখ ৩৬ হাজার, ২০২৪ সালে ১ লাখ ৫১ হাজার এবং ২০২৫ সালে ১ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিক আমদানি করা হবে দেশটির মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ক সরকারি গেজেটে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১ লাখ ৩৬ হাজার শ্রমিক আমদানির জন্য ডিসেম্বরের ২, ৪ এবং ৮ তারিখ থেকে আবেদন জমা নেয়া শুরু হবে। আবেদন ফর্ম ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
গেজেট থেকে জানা গেছে, আগামী ২ ডিসেম্বর স্থায়ী শ্রমিক বা নন সিজন্যাল শ্রমিকের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। এই ক্যাটাগরিতে ৫২ হাজার শ্রমিককে ভিসা দেওয়া হবে। ৪ ডিসেম্বর গৃহকাজের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। এতে বেবি এবং বয়স্ক সিটিংসহ প্রায় ১০ হাজার ভিসা দেওয়া হবে। ৮ ডিসেম্বর তারিখে সিজন্যাল ক্যাটাগরির জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে এবং ৮২ হাজার ভিসা দেওয়া হবে।
ইতালিতে আবেদন গ্রহণ শুরুর দিনকে ‘ক্লিক ডে’ বলা হয়। সুতরাং ২০২৩ সালের ক্লিক ডে হলো- ২, ৪ ও ৮ ডিসেম্বর।
এ ছাড়া সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ২০২৪ সালের ১ লাখ ৫১ হাজার শ্রমিকের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ক্লিক ডে- ৫, ৭ ও ১২ ফেব্রুয়ারি।
গেজেট থেকে জানা যায়, কোনো শ্রমিক সরাসরি আবেদন করতে পারবেন না। শ্রমিকের পক্ষে নিয়োগদাতা অনলাইনে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করবেন। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিগত দিনের ট্যাক্স প্রদান নিয়মিত এবং গৃহ মালিকদের নির্দিষ্ট অঙ্কের বার্ষিক আয় থাকতে হবে। নিজের বাড়ি বা ভাড়া বাড়ির কন্ট্রাক থাকতে হবে। ইতালিয় ডকুমেন্টধারী ‘কার্তা দি সোজর্ন’ অভিবাসীরাও শ্রমিক আমদানি করতে পারবেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা গৃহে কাজের জন্য।
নিয়োগপ্রাপ্তদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। অন্তত ২ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট থাকতে হবে। যারা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের কর্মদক্ষতার প্রমাণাদি থাকতে হবে। শিক্ষাগত কোনো সনদ প্রয়োজন হবে না।
আবেদন করতে শ্রমিকের খরচ হওয়ার সুযোগ নেই। আবেদনকারী বা নিয়োগদাতার খরচ হয় ১৬ ইউরো। অর্থাৎ আবেদনের সঙ্গে ১৬ ইউরো মূল্যের একটি ডাকটিকেট (মার্কা দ্য বোল্লো্) সংযোগ করতে হয়। এর বাইরে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে যদি কোনো হেল্প ডেক্সের সহযোগিতা নেওয়া হয়, সেখানে এক থেকে দেড়শ ইউরো খরচ হতে পারে। কিন্তু একজন শ্রমিক যেহেতু সরাসরি আবেদন করতে পারেন না বা বাংলাদেশে বসে ইতালীয় নিয়োগদাতা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব প্রায়, মাঝখানে দাঁড়িয়ে যায় একজন মধ্যস্বত্বভোগী। মূলত শ্রমিকের কাছ থেকে সেই মোটা অঙ্কের অর্থ নেয়। যা ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত গড়ায়।
জানা যায়, অতীতে বাংলাদেশের জন্যে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজারের কোটা বেঁধে দেওয়া হলেও এখন কোনো কোটা নেই। মেলোনি সরকার দেশভিত্তিক কোটা পদ্ধতি উঠিয়ে দিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশসহ কোনো দেশের জন্যেই নির্দিষ্ট কোনো কোটা নেই।
এর আগে আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ উল্লেখ থাকলেও এবার সরকারি গেজেটে কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ২০২৩ সালের মোট ১ লাখ ৩৬ হাজারের কোটা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ চলবে। তবে সাধারণত ক্লিক ডের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই কোটা পূরণ হয়ে যায়।
আবেদন করলেই কী ইতালিতে যাওয়া যাবে?
প্রতিটা আবেদন যাচাইবাছাই করা হবে। আবেদনের সকল শর্ত ঠিক থাকলে এবং কোটার আওতায় থাকলে ২ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ‘নূল্যা-ওস্তা’ (ভিসার অনুমোদনপত্র) বা এনওসি দেওয়া হবে নিয়োগদাতার কাছে। নিয়োগদাতা সেটা পাঠাবেন শ্রমিকের কাছে। শ্রমিক সেটা জমা দিয়ে ঢাকার ইতালীয় দূতাবাস বা ভিসা এজেন্সিতে ভিসার জন্যে আবেদন করবেন। সাধারণত নূল্যা-ওস্তায় কোনো অসঙ্গতি না থাকলে ভিসা রিফিউজ করা হয় না। অতীতে দালাল চক্র নকল নূল্যা-ওস্তা দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করার খবর ইতালিয় মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
ইতালি এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও অনুকূল একটা দেশ। ২০২২-২৩ সালে ইতালির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে বাংলাদেশি ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে ভিসা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য ইতালিয় বিশ্ববিদ্যায়লগুলোয় যোগাযোগ করতে হবে। সহজ স্কলারশিপ ইতালিতে শ্রমিক আমদানিসহ কম খরচে উচ্চশিক্ষার জন্য ইতালি এখন এশিয়ানদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় দেশ।
উল্লেখ্য, ইতালিতে সাধারণ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশ সুনাম আছে। নিয়োগদাতারা বাংলাদেশি শ্রমিকদের পছন্দ করেন। ২০২২-২৩ সালের এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিককে ভিসা দেওয়া হয়েছে। ইতালিতে বৈধভাবে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে।
মন্তব্য করুন