কানাডা, যা একসময় অভিবাসীদের জন্য সোনালি দুয়ার হিসেবে পরিচিত ছিল, সেখানে হঠাৎ করেই দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছেন অভিবাসীরা। দেশটিতে বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। স্বপ্নীল জীবন আর উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানিতে যারা দেশান্তরী হয়েছিলেন, তাদের অনেকের কাছেই এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এক গভীর হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, অভিবাসন বিধিমালা আরও কঠোর করে গত ৩১ জানুয়ারি একটি গেজেট জারি করে কানাডা সরকার। যার আওতায় অভিবাসীদের অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি বাতিল, পড়াশোনা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের সুযোগ দেওয়া হয় অভিবাসন কর্মকর্তাদের।
প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন হচ্ছে? কেনো অভিবাসীবান্ধব কানাডা হঠাৎ অভিবাসীদের প্রতি কঠোর হচ্ছে। কেনো কানাডা অভিবাসীদের অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি বাতিল করছে? কেনো বিদেশী শিক্ষার্থীদের কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়ার সুযোগ কমানো হচ্ছে? কী সেই কারণগুলো, যা কানাডার কর্মক্ষেত্রে আসা অভিবাসীদের তাদের অর্জিত ওয়ার্ক পারমিট হারাতে বাধ্য করছে?
জানা গেছে, হাজারও অভিবাসীর নতুন করে কাগজপত্র নবায়নের প্রক্রিয়ায় বেশ সময় লাগছে। এর সাথে রয়েছে বিভিন্ন নিয়মের পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত অনুমোদন পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে অভিবাসীরা বৈধ মর্যাদা ধরে রাখতে পারছেন না। কর দেওয়া সত্ত্বেও তারা না পারছেন কাজ করতে, না পাচ্ছেন স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা।
ব্যাকলগের বোঝায় বাড়ছে অনিশ্চয়তা, সম্প্রতি এলএমআইএ অনুমোদনের সময় আগের চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে এই কাজে সময় নিতো ৫৮ কার্যদিবস, ২০২৫ সালের মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ১৬৫ কার্যদিবসে। সার্ভিস কানাডা জানিয়েছে, তারা এখনো ২০২৪ সালের এপ্রিলে দাখিল হওয়া আবেদনগুলো প্রসেস করছে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারের অবস্থান একেক সময় একেক সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে। অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কানাডার লিবারেল সরকার বর্তমানে বলছে, তারা সীমিতভাবে এই সুযোগ দেবে। কেবল নির্দিষ্ট খাতে কাজ করা অভিবাসীরাই এই সুযোগ পেতে পারেন। একই সঙ্গে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আগামী ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনের আগে অভিবাসন কমানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এই অপ্রত্যাশিত মোড় কানাডা অভিবাসীদের জীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং কানাডার অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করেছে। পুরো বিষয়টি তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
মন্তব্য করুন