বৃষ্টিস্নাত দিনে টাইমস স্কয়ার হয়ে উঠলো বৈশাখের রঙিন দিন। এইদিনে সহস্র বাঙালি একত্রিত হয়ে সুরে-সঙ্গীতে-নৃত্যে পালন করলো তাদের প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ।
এদিন উৎসবের উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটানের কনসোলার জেনারেল। একইসঙ্গে বহু দেশ ও জাতির মানুষ উপস্থিত থেকে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করে, যা রূপ নেয় আন্তর্জাতিকতায়। দুদিনের অনুষ্ঠানের প্রথমটি দিনটি ১২ এপ্রিল টাইমস স্কয়ারে এবং ১৩ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটে পালিত হয় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব।
এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে ‘ছায়ানটে’র সভাপতি ও সংস্কৃতি-সাধক সদ্য প্রয়াত প্রফেসর ড. সনজীদা খাতুনকে।
বিশ্ববাঙালির আয়োজনে দুই দিনব্যাপি এ অনুষ্ঠান নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ার এবং জ্যাকসন হাইটস ডাইভার্সিটি প্লাজায় অুনষ্ঠিত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। যেখানে শতকণ্ঠে শিশুরা গান গেয়ে এবং সহস্রকণ্ঠে বড়দের সুর এবং গানে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে। আয়োজক সংগঠন প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের মহড়া ও নিবিড় অনুশীলনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত করা হয় সকলকে।
কণ্ঠশিল্পী মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে শত কণ্ঠ থেকে সহস্রকণ্ঠের এই বর্ষবরণ বাঙালি সংস্কৃতির পালকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর সঙ্গে খ্যাতিমান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সুরেরধারা যুক্ত হয় উৎসবের সঙ্গে। বর্ষবরণ উৎসবে একইরকম শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে নারী-পুরুষের বর্ণিল পরিবেশনায় বাংলার জয় ঘোষণা করা হবে।
১৪৩২ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণের বিশেষত্ব হলো বহুমাত্রিকতা। সহস্রকণ্ঠের পরিবেশনায় রয়েছে নতুনত্ব; সঙ্গে নিউইয়র্ক রাজ্যসরকারের ক্যালেন্ডারে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের স্বীকৃতি এবং এশিয়ার কৃষিপ্রধান ৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকার কনসাল জেনারেল ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিঃসন্দেহে বৈচিত্র্য এনেছে প্রবাসী বাঙালিদের সর্ববৃহৎ এই আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে।
নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। দৃশ্যত বাস্তবতা হলো, ২০২৫ সালে এসেই উৎসবটি আন্তর্জাতিক মহিমা অর্জন করেছে। বলাবাহুল্য, বাংলা বর্ষবরণের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এ বছরের উদযাপনকে অনেক বেশি তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে; পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক উৎসবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের স্বীকৃতি দিয়ে অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে গভর্নর অফিস বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ২৮ এপ্রিল উদযাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অনুরোধে সিনেটর লুইস সেপুলভেদার ১৫ জানুয়ারি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার অধিবেশনে ২০২৫-এর ২২ জানুয়ারি আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়, ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এই অঙ্গরাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি হিসেবে এবং এই রাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে সম্প্রীতি দৃঢ় করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
মন্তব্য করুন