স্বপ্নপূরণে মালয়েশিয়ায় এসে প্রতারিত হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হচ্ছে হারুন অর রশিদ নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিককে। নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের পর জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোরও অভিযোগ করেছেন তিনি।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে প্রবাসী এই বাংলাদেশি ন্যায় বিচার পেতে দারস্থ হয়েছেন মালয়েশিয়ার শিল্প আদালত, আইএলও, ইউএনএইচসিআর, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার।
সম্প্রতি কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং এ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ক্যাথারসিস রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ফেলক্রা বারহাদ নামে একটি পাম ওয়েল কোম্পানিতে কাজ নিয়ে আসেন। মালয়েশিয়ার পাহাংয়ের সরকারি মালিকানাধীন ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে প্রথম ছয় মাসে মাত্র ১৫০ রিঙ্গিত বা বাংলাদেশি টাকায় ৪ হাজার টাকা বেতন দেয়া হতো। এত কম টাকা বেতন দেওয়ায় সেসময় অনেকেই কোম্পানি থেকে পালিয়ে যায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়োগকর্তা তার ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে ব্যর্থ হন।
হারুনের দাবি, পারমিট নবায়নে ব্যর্থতার পর তাকে অন্যায়ভাবে নিয়োগকর্তা চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। ভিসা নবায়ন সম্পর্কে নিয়োগকর্তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও তাকে বলা হয়েছিল এটি ‘প্রক্রিয়াধীন’ রয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে নিয়োগকর্তা তাকে অবহিত না করে ইমিগ্রেশন বিভাগের অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচির অধীনে তার নাম নিবন্ধন করেন। এই কর্মসূচিটি সাধারণত নথিবিহীন অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য।
পরে হারুন তার নিয়োগকর্তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে, দেশটির শিল্প আদালতের শরণাপন্ন হন। যেখানে ২৪ মার্চ শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে। শুনানি শেষে দেশে ফিরে যেতে হবে হারুনকে।
এ বিষয়ে গত ১৮ মার্চ কুয়ালালামপুরের বুকিত বিন্তাংয়ের একটি রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশিদ বলেন, কোম্পানির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় কর্মকর্তা ভিসা নবায়ন করার আশ্বাস দিলেও তা না করে হঠাৎ করেই বিমান টিকিট ও ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেশে চলে যেতে বলে।
ওই কর্মকর্তার কাছে দেশে পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে, কোম্পানি আর তার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি নবায়ন করবে না বলে জানানো হয়।
হারুন বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম ও মানবাধিকার সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরপর নিজ দেশের দূতাবাসের কাছে সহায়তা চেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দেন, কিন্তু দূতাবাস তাকে সহযোগিতা করেনি। শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ভুক্তভোগী ওই বাংলাদেশি কর্মী।
এ প্রসঙ্গে হারুন বলেন, ক্ষতিপূরণ বা অন্য কিছু চাই না, দেশে যেতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার শুধু একটাই দাবি বৈধভাবে এসে অবৈধ এবং কালো তালিকা ভুক্ত হয়ে স্থানীয় ইমিগ্রেশনের কাছে ক্ষমা চেয়ে কেন দেশে যেতে হবে? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।
হারুন আরও বলেন, লাখ লাখ প্রবাসীর দেশ মালয়েশিয়ায় প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ অন্যায় আর অবিচারের শিকার হচ্ছে। তবে কেউই এর প্রতিবাদ করে না। আমি এসব অত্যাচারিত কর্মীর প্রতিচ্ছবি মাত্র। আমি চাই এ ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত শাস্তি যাতে ভবিষ্যতে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
মন্তব্য করুন