মোস্তফা ইমরান রাজু, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ১৩ দেশের শিল্পী

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত। ছবি : কালবেলা
মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত। ছবি : কালবেলা

দিনব্যাপী নানা বর্ণিল আয়োজনে মালয়েশিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ উদ্দীপনায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পঁচিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে কুয়ালালামপুর অ্যান্ড সেলেনগর চাইনিজ অ্যাসেম্বলি হলে আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে এ আয়োজনে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। ভাষা শহীদ এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান তার বক্তব্যে বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন সারা বিশ্বে ভাষাগত বৈচিত্র্য উদযাপনের দিনে পরিণত হয়েছে। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

তিনি এ দিবস উপলক্ষে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং আগত বিদেশি অতিথিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। শামীম আহসান বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিবর্তনমূলক সংস্কার আনার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত কেনেডি মেয়ং অনন (Ambassador Kennedy Mayong Onon)। তিনি তার বক্তৃতায় ভাষাগত বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশ -মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এ পর্বে ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিস, জাকার্তার কান্ট্রি ডিরেক্টর মিসেস মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়া (Ms Maki Katsuno-Hayashikawa)-এর ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়। মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়া তার ধারণকৃত বক্তব্যে বহুভাষিকতা রক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার এবং ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক, সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস, বাংলাদেশ, মিজ লেইলা নাগমানোভা (Ms. Leyla Nugmanova), ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেসেন্টিটিভ, ইউএনএইচসিআর এবং মালয়েশিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. রামিন হাজিনাফার্ড (Dr. Ramin Hajianfard)। এ সময় আলোচকরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে সব ভাষাভাষীর ঐক্যের চেতনার কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে তারা ঐক্যের একটি শক্তিশালী ও অনুপ্রেরণামূলক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেন। বক্তারা বহুভাষিকতার প্রসারে মাতৃভাষা ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ১৩টি দেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন, সুদান, তানজানিয়া, নেপাল, জাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিজিস্তান, মেক্সিকো এবং বাংলাদেশ হাই কমিশন পরিবারের সদস্যরা এবং শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের বিমোহিত করে। একই মঞ্চে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের বর্ণিল পরিবেশনা এক অনন্য সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

অনুষ্ঠানে হাইকমিশনারের সহধর্মিণী পেন্ডোরা চৌধুরী, কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারসমূহ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, সাংবাদিকরা এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী সদস্য তাদের পরিবারসহ উপস্থিত ছিলেন। মিনিস্টার (রাজনৈতিক) ফারহানা আহমেদ চৌধুরীর উপস্থাপনা পুরো আয়োজনে অতিথিদের বিমোহিত করে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে আগত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার পরিবেশন করা হয়।

এর আগে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয়।

পরে প্রভাতফেরির মাধ্যমে হাইকমিশনের অস্থায়ী শহীদ মিনারের বেদিতে হাইকমিশনারের নেতৃত্বে হাইকমিশন পরিবারের সদস্যরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অতঃপর, মালয়েশিয়ায় স্থানীয় কমিউনিটির নেতারা এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্যরা পর্যায়ক্রমে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

মূল আলোচনার শুরুতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটিকে কেন্দ্র করে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয় এবং এ দিবস উপলক্ষে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মালয়েশিয়ায় ৮৫ বাংলাদেশিসহ ৫৯৮ অভিবাসী আটক

গোপালগঞ্জে দুই বাসের সংঘর্ষ, প্রাণ গেল চালক-সুপারভাইজারের

স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবার মান ও দাম নিয়ে গণশুনানির আহ্বান

‘বাংলাদেশের সংকটে জিয়া পরিবার পাশে ছিল’

নিজেদের পাতানো ফাঁদে প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর

চীনে নতুন করোনাভাইরাস, আবারও ছড়ানোর শঙ্কা

ডিপিএলে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন সাকিব

নরসিংদীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৬৩

সাংবাদিক নেতারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিলে রোজগারের চেষ্টা করেছেন : শফিকুল আলম

নারী ধর্ষণের প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে মশাল মিছিল

১০

সারা দেশে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

১১

সুনামগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি 

১২

আলেপের ধর্ষণের বিষয়ে আরও ভয়ংকর তথ্য সামনে এলো

১৩

দুর্নীতি ও দুঃশাসনের সঙ্গে কোনো আপস নেই: শফিকুর রহমান

১৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক তানজিম বহিষ্কার

১৫

‘এই গেম কোত্থেকে চলতেছে আমরা ঠিকই বুঝি’

১৬

ভিসি, প্রো-ভিসির অপসারণে প্রধান উপদেষ্টাকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের চিঠি

১৭

বেলিংহামের নিষেধাজ্ঞা বহাল, আপিলে ব্যর্থ রিয়াল মাদ্রিদ

১৮

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে বড় পরিবর্তন

১৯

সতীর্থের বিতর্কিত লাল কার্ডের পর রোনালদোর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

২০
X