কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির আওতায় আনতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

মোহাম্মদ মহসিন মিয়াকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রোমানিয়া ভিসাপ্রত্যাশীরা। ছবি : কালবেলা
মোহাম্মদ মহসিন মিয়াকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রোমানিয়া ভিসাপ্রত্যাশীরা। ছবি : কালবেলা

নানা অভিযোগে অভিযুক্ত রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ মহসিন মিয়াকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রোমানিয়া ভিসাপ্রত্যাশীরা। মহসিন মিয়াকে অতিদ্রুত অপসারণের পাশাপাশি শাস্তির আওতায় আনতে ৭ দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। দাবি না মানলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোমানিয়ার ভিসাপ্রত্যাশী ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি মহসিন মিয়াকে অতিদ্রুত অপসারণ করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

‘প্রবাসীবান্ধব হয়রানিমুক্ত দূতাবাস চাই’, ‘নারীলিপ্সু এবং অদক্ষ কূটনীতিক মহসিন মিয়ার অপসারণ চাই’সহ বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্লেকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন রোমানিয়া ভিসাপ্রত্যাশীরা।

ভিসাপ্রত্যাশীরা বলেন, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে রোমানিয়ায় প্রবেশকারী বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে ছিল। কিন্তু রোমানিয়ায় শ্রম উইংয়ের প্রতিষ্ঠাতা দাবিকারী মহসিন মিয়ার যোগদানের পর সব পরিবর্তিত হতে থাকে। বাংলাদেশ এখন প্রথম ৩ দেশের মধ্যেও নেই। কারণ, মহসিন মিয়া সহকর্মীদের পাশাপাশি রোমানিয়ার ইমিগ্রেশন, শ্রম মন্ত্রণালয় ও রোমানিয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করেন। ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের ক্ষেত্রেও মহসিন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করেছেন। এতে, কোনো রোমানিয়ান কোম্পানি ভয়ে আর তার কাছে যান না। বরং তারা এখন নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ভারতমুখী।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রোমানিয়া প্রবাসী ফয়জুল বলেন, আমি ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছি। মহসিন মিয়া অ্যাম্বাসিতে কোনো কাজ করেন না, শুধু গল্প দেন- আমি এই করছি, সেই করছি। কিন্তু তিনি প্রবাসীদের সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেন। কোনো অসহায় শ্রমিক লিগ্যাল হেল্প চাইলে তার কাছে টাকা চান।

মনসুর নামে রোমানিয়াগামী এক তরুণ বলেন, মহসিন সাহেবের কার্যক্রমের যে ফিরিস্তি দেখছি তাতে রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে যেন যেতে না হয়, সে চেষ্টা করব। উনি রোমানিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিকে থ্রেট দেওয়ায় অনেক বাংলাদেশির চাকরি চলে গেছে।

এত এত অভিযোগ থাকার পরও মহসিন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কেন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নিয়ে পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠজনকে সাদরে লালন-পালন করছে, সে বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বক্তারা জানান, মহসিন মিয়ার আস্ফালনে টেকা দায় হয়ে গিয়েছে। বারবার রিপোর্টের পরেও যদি কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে ৭ দিন পর দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, সেখানে প্রবাসী কল্যাণ সচিবও দায় এড়াতে পারবেন না।

মানববন্ধন শেষে মহসিন মিয়ার অপসারণ দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

স্মারকলিপিতে রোমানিয়ায় ভিসাপ্রত্যাশীরা জানান, সম্প্রতি দৈনিক কালবেলায় রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং প্রথম সচিব মোহাম্মদ মহসিন মিয়ার নামে একাধিক অভিযোগ সংবলিত একটি অনুসন্ধানি রিপোর্ট প্রকাশ পেলেও তার উপযুক্ত শাস্তি প্রদানে কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে। আমরা যারা রোমানিয়া-বুলগেরিয়া-মলদোভা-নর্থ মেসিডোনিয়াগামী/ভিসাপ্রত্যাশী ছাত্র-জনতা, তারা মহসিন মিয়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত অভিযোগগুলো সত্য বলে জানতে পেরেছি। স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মহসিন মিয়া রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, মলদোভা ও নর্থ মেসিডোনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফোন করে তার ক্যান্ডিডেটদের ভিসা প্রদানের জন্য তদবির করেন, যা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং উল্লেখিত দেশগুলো এতে বিরক্ত। বিষয়টিতে দিল্লিতে অবস্থিত ওই দেশগুলোর দূতাবাসগুলো অবলীলায় এ বিষয়ে আমাদের প্রার্থীদের প্রশ্ন করছে ও ভিসা রিজেক্ট করছে। ফলে লাখ লাখ টাকা-পয়সা খরচ করেও ভিসা পাচ্ছে না আমাদের জনগণ। মহসিন মিয়ার রোমানিয়ান সহকর্মীদের সঙ্গে যৌন নিপীড়নমূলক আচরনের কূটনীতিক হবার কারণে তারা মহসিন মিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি অ্যাকশন না নিতে পারলেও প্রভাব পড়ছে পুরো দেশের ওপর। মহসিন মিয়া রোমানিয়ার ইমিগ্রেশন, শ্রম মন্ত্রণালয় ও রোমানিয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসী ভাইয়েরা। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা কমে গেছে এবং অনেক বাংলাদেশিদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি রোমানিয়ান নাগরিককে মহসিন ‘নিকৃষ্ট খ্রিস্টান শূকর’ বলে গালি দিয়েছেন। ওই রোমানিয়ান নাগরিক মহসিনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন, আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন, মামলা করার প্রস্তুতি ও বুখারেস্ট প্রেস ক্লাবে প্রেস কনফারেন্স ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সরকার মহসিনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিলে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে নেমে যেতে পারে। এ ছাড়া মহসিনের প্রেস্ক্রিপশনে বিএমইটি কার্ড ইস্যুকরণ করতে বিএমইটি অনেক ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য’ দেখাচ্ছে। ফলে রোমানিয়া-বুলগেরিয়াগামী অনেক ব্যক্তির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। ২০২৩ সালে শ্রম উইং খোলার পর মহসিন নিজেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (হাসিনা) কার্যালয়ের সাবেক ‘সহকারী প্রেস সচিব’, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ‘ভাতিজা’ পরিচয় দিতেন। পতিত স্বৈরাচারের আমলে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও প্রবাসী উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্পর্কে জনসম্মুখে বিষোদগার করতেন। পতিত ফ্যাসিস্টের এই দোসরকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া এখন সময়ের দাবি। এ রকম দুর্নীতিবাজ, নারীলিপ্সু, লাশ ব্যবসায়ী, ফ্যাসিস্টের দোসর ও অদক্ষ কূটনীতিক রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ মহসিন মিয়ার বিরুদ্ধে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় শাস্তি ও অপসারণ নিশ্চিত না করলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যাবে রোমানিয়া ভিসাপ্রত্যাশী আপামর ছাত্র-জনতা। এর আগে, মহসিন মিয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রোমানিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটিও একটি বিবৃতি দেয়। গত ৩ জানুয়ারি দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দৈনিক কালবেলায় দূতাবাসের প্রথম সচিবের (শ্রম) বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে ওই কূটনৈতিক কর্মকর্তা একটি প্রতিবাদলিপি লিখেছেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও অপ্রাসঙ্গিক।

প্রতিবাদলিপিতে তিনি তার বক্তব্যে রোমানিয়ায় বসবাসকারী স্বনামধন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাম উল্লেখ করে কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই ‘মানব পাচারকারী ও মাফিয়া চক্র’ বলে অভিহিত করেছেন ও বিভিন্ন কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছেন। পরবর্তীতে তার একটি সংশোধিত লেখায় তিনি পুরো বাংলাদেশ কমিউনিটির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। তাই আমরা প্রথম সচিবের (শ্রম) মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদনকে তীব্র ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ সত্য। মহসিন মিয়া কোনো কারণ বা প্রমাণ দর্শাতে না পারলে অথবা তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে বাংলাদেশ কমিউনিটির সব সদস্য তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও রোমানিয়ায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাবির মুহসীন হলে পলেস্তারা খসে পড়ে ঘুমন্ত শিক্ষার্থী আহত

ঢাকার তোপখানা রোডের আগুন নিয়ন্ত্রণে

চীনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু মৃত্যুর শঙ্কা, ৩২ মরদেহ উদ্ধার

কানাডা দখলের ফের খায়েশ জানালেন ট্রাম্প

ভারতের দখলে থাকা কোদলা নদীর ৫ কিলোমিটার উদ্ধার করেছে বিজিবি

ঢাকার তোপখানা রোডে ভয়াবহ আগুন

ঢাকার বাতাস আজও ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

ইতালিতে কুমিল্লা জাতীয়তাবাদী ফোরামের কর্মিসভা

দুই বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, বাড়বে শীতের তীব্রতা

দেশে ফিরলেন ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ৯০ বাংলাদেশি

১০

৩ ইহুদিকে গুলি করে হত্যা

১১

পঞ্চগড়ে শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি

১২

ফল প্রকাশের ৭ দিন পর সনদ পাবেন রাবি শিক্ষার্থীরা

১৩

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৪

৭ জানুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৬

কুড়িগ্রামে চাঁদাবাজির মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৭

দেশে ফের ভূমিকম্প অনুভূত

১৮

১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

১৯

‘আ.লীগ ক্ষমতায় থাকতে দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে’

২০
X