সংযুক্ত আরব আমিরাতে চার মাসব্যাপী সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। আভাস মিলেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বন্ধ থাকা ভিসার দুয়ার খোলার। ভিসা চালু হওয়ার খবরে বাংলাদেশি শ্রমবাজারে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
০১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার দুমাসের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই সুযোগ দুই মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের বিনা জেল-জরিমানায় দেশত্যাগ কিংবা আমিরাতে তাদের অবস্থান বৈধকরণের জন্য ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হয়েছে। এবারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগে প্রত্যাশা অনুযায়ী অবৈধ প্রবাসীরা দেশত্যাগ না করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী বৈধ হয়েছেন বলে মনে করছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা।
আবুধাবি দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর হাজরা সাব্বির হোসেন জানান, গত চার মাসে দেশত্যাগ করার জন্য মাত্র ৪১৮ জন ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করলেও স্পন্সর খুঁজে কেবল আবুধাবীতে বৈধ হয়েছেন আনুমানিক ২০ হাজার রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
দূতাবাসের কাউন্সিলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) সাইফুল ইসলাম জানান, সাধারণ ক্ষমার মেয়াদের সময়সীমার প্রতি দৃষ্টি রেখে সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট প্রেরণের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিল। গত চার মাসে দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে ১৯ হাজার ৭৪৮টি।
সূত্রমতে, যারা দূতাবাস, কনস্যুলেট, ইমিগ্রেশন সেন্টার, তাসহিল/আমের সেন্টারে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে এসেছেন তাদের ৯৫ শতাংশই বৈধ হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাকি ৫ শতাংশ ফিরেছেন দেশে।
দুবাই কনস্যুলেটের প্রেস উইং জানিয়েছেন, বিগত চার মাসে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে বৈধভাবে আমিরাত ছেড়েছেন ৪ হাজার ৭৩৫ জন। শ্রমঘন এলাকা উত্তর আমিরাত ও দুবাইয়ের কতজন প্রবাসী ভিসা নিয়ে বৈধ হয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও পাসপোর্ট ইস্যুর পরিমাণ থেকে সংখ্যা অনুমান করা যায়। কনস্যুলেট সূত্রে জানা যায়, গত চার মাসে প্রবাসীদের আবেদনের বিপরীতে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন ৬০ হাজার ১৯৩ প্রবাসী। যার অধিকাংশ মানুষ সাধারণ ক্ষমার সুবিধা নিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
২০১২ সালের মধ্য আগস্ট থেকে আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি, চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত অনুপ্রবেশ, ভিসা জালিয়াতিসহ নানা অপরাধ প্রবণতায় বাংলাদেশিদের সম্পৃক্তির অভিযোগে সাধারণ কর্মীভিসা বন্ধ করে দেয় আমিরাত। আরবদের গৃহকর্মী, ব্যক্তিগত ড্রাইভার, ফ্রি জোনসহ সীমিত কিছু ক্যাটাগরিতে ভিসা খোলা রাখা হলেও তার সুফল বাংলাদেশিরা তেমন একটা পাননি। করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশিদের জন্য ভিজিট ভিসা খুলে দেওয়া হলে আদম ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে কিংবা ভাগ্য বদলের আশায় প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি আমিরাতে প্রবেশ করেন। এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী ভিসা নিয়ে বৈধতা পেলেও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে কিংবা ভিজিট ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অবৈধ হয়ে যায়।
এদিকে নতুন বছর ২০২৫ সালের শুরুতেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের ভিসা সমস্যা সমাধান হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভিসা উন্মুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাশিফ আল হামুদি।
গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা নিয়ে খোলামেলা বক্তব্যে সুখবর দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশিদের জন্য আমিরাতের ভিসা জটিলতা দূর হবে। চালু হবে ভ্রমণ ভিসাসহ সব ধরনের ভিসা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ অসংখ্য দেশের জন্য আমিরাতে ভিসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে যেখানে আমিরাতে বাংলাদেশির সংখ্যা মাত্র সাত থেকে আট লাখের মধ্যে ছিল, সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশির সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যেটা অন্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনবল নিয়োগে আরও বেশি আন্তরিক হবে। বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি প্রফেশনাল এবং দক্ষ শ্রমিকদের ভিসার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার আগে ভিসার জন্য কোন আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছেন দূতাবাস ও কনস্যুলেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে যারা বৈধ হতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই আইনতঃ ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে আমিরাত কর্তৃপক্ষ। লঙ্ঘনকারী এবং বিদেশি ফলোআপ সেক্টরের সহকারী মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সালাহ আল কামজি খালিজ টাইমসকে বলেন, যারা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন