টরন্টোয় ‘মিট দ্য হাইকমিশনার’ অনুষ্ঠান নিয়ে একটি রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহলের মিথ্যা ও আজগুবি অপপ্রচারে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অপপ্রচারকারী মহল বিগত পলাতক ফ্যাসিবাদী সরকারের মতো অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং টরন্টোয় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। তারা অটোয়ায় নতুন হাইকমিশনার এবং টরন্টোর বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ নানা বানোয়াট তথ্য প্রচার করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর টরন্টোয় বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিস নাহিদা সোবহানের এক মতবিনিময় সভা (মিট দ্য হাইকমিশনার) অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ টরন্টোতে বসবাসরত বয়োজ্যেষ্ঠ, সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সর্বজনীন এই মতবিনিময়ে প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, রাজনীতিক, সামাজিক নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হওয়া এই মতবিনিময়ে আয়োজক ছিলেন টরন্টোয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং বিএনপি নেতা, টরন্টোর সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাহবুব চৌধুরী রনি, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ চৌধুরী, সিপিএ জোবায়ের আহমদসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল সরকারের এমপিপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডলি বেগম। উপস্থিত ছিলেন, টরন্টো কনস্যুলেটের ভারপ্রাপ্ত কনস্যাল জেনারেল ফাহমিদা সুলতানা। অনুষ্ঠানের শুরুতে কানাডা ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের ফ্যাসিবাদ-স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে হাইকমিশনারের শুভেচ্ছা বিনিময়, কমিউনিটির সম্মানিত বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে হাইকমিশনের সংযোগ স্থাপন এবং অটোয়া ও টরন্টোয় কনস্যুলার সেবায় বিগত হাইকমিশনারের সৃষ্ট বিভিন্ন জটিলতা তুলে ধরে তা নিরসনের আহ্বান জানানো। এ লক্ষ্যে হাইকমিশনারকে বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে নো ভিসা স্টিকার, পাসপোর্ট, বার্থ সার্টিফিকেট, এনআইডি, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি, বিমানের ভাড়া কমানোসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনারকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান কানাডা বিএনপির সভাপতি আহাদ খন্দকারসহ কমিউনিটির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ও আয়োজকরা। কমিউনিটিতে ব্যাপক সাড়া জাগানো সর্বজনীন এমন একটি অনুষ্ঠানকে সমালোচিত এবং প্রবাসীদের বিভ্রান্ত করতে বিএনপির একজন নেতা হাইকমিশন ও কনস্যুলেটে একক আধিপত্য বিস্তার করতে নির্লজ্জভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও আজগুবি অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন নামসর্বস্ব অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন অফিসে মিথ্যা তথ্য পাঠিয়েছেন।
এই নেতা মতবিনিময় অনুষ্ঠানের দুদিন আগে অটোয়ায় হাইকমিশনে ফোন করে কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে আসতে হাইকমিশনারকে বাধা দেন। টরন্টো কনস্যুলেটে ফোন করেও বাধা দেন। তিনি অটোয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের বলেন, টরন্টোতে কিছু করতে হলে তিনিই করবেন। সবকিছু হবে তার কথামতো। তার কথা না শুনলে হাইকমিশনারকে কানাডা থেকে তাড়িয়ে দেবেন বলে ঘোষণা দেন। বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের মতো বিএনপির এই নেতা সবকিছু তার একক নিয়ন্ত্রণে নিতে বেপরোয়া হয়ে গেছেন।
অথচ দেশে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় সরকার অধিষ্ঠিত রয়েছে। হাইকমিশনারকে কাছে পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায় ৩ ঘণ্টা প্রাণখুলে তাদের মনে কথা বলেছেন। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, বিগত অন্তত ২০ বছরের মধ্যে আমরা কোনো হাইকমিশনারকে এভাবে কমিউনিটির লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে দেখিনি। দূতরা কখনো নিজ দেশের লোকদের খোঁজখবর নেননি। বিগত দিনের হাইকমিশনার ও কনস্যাল জেনারেলরা আসতেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষমতাধর নেতাদের বাসায় আমন্ত্রণে। প্রায় সকল বক্তা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের নিয়মনীতি পরিবর্তন করে কনস্যুলার সেবা সহজীকরণ, দালালদের বিতাড়ন এবং জাতীয় বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠানে সকল শ্রেণিপেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য হাই কমিশনারকে অনুরোধ জানান।
বিগত দিনের মতো কোনো গোষ্ঠী বা মহলের হাতে জিম্মি না হয়ে কানাডার বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময় এবং সংযোগ অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন। হাইকমিশনারও অত্যন্ত ধর্যসহকারে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথা ও পরামর্শ শোনেন। তিনি বিশেষ কোনো মহলের কাছে জিম্মি না হয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় সবাইকে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এমন চমৎকার একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সকল বক্তা আয়োজকদের অভিনন্দিত করেন এবং ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।
বক্তারা বলেন, বিগত দিনে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবসম্পন্ন হাইকমিশনার সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের ওপর বিভিন্ন ‘কালো নিয়মনীতি’ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব অগণতান্ত্রিক নীতির কারণে দেশের সঙ্গে কানাডা প্রবাসীদের নাড়ির সংযোগে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। জটিল নিয়মনীতি ও প্রক্রিয়ার কারণে কানাডায় জন্মগ্রহণ করা বাংলাদেশি বংশদ্ভূত শিশু-কিশোরদের দেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অভিভাবকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। যে কেউ শুনে আশ্চর্য হবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য কনস্যুলার সেবার নিয়মনীতি একরকম, আর কানাডার ক্ষেত্রে তা সম্পুন্ন ভিন্ন।
২০২২ সালে একজন ‘প্রবাসী বিদ্বেষী’বাংলাদেশি দূত তার ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে কানাডা প্রবাসীদের ওপর ‘নতুন নিয়ম’এর নামে স্ট্রিম রোলার চালিয়েছেন। তিনি দম্ভ করে বলতেন ‘আমি পার্ট অব বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট। আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা মূলত বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধেই কথা বলেন। কমিউনিটির কে কি বলল, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। এটা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স না। বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করবে, টাকা পাচার করে আনবে আর আন্দোলন করবে, এটা হতে পারে না।’ তিনি কানাডা প্রবাসীদের জন্য সারাদিন চিন্তা করতেন, আর কি কি কঠিন নিয়ম প্রবর্তন করা যায়। মতবিনিময় সভায় বিগত দূতের প্রবর্তিত প্রবাসী বিদ্বেষী এসব কালাকানুন বাতিলের জোর দাবি করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের মতো কানাডায়ও অভিন্ন নিয়েমে কনস্যুলার সেবা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়।
এমন একটি অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে স্বার্থান্বেষী একজন রাজনৈতিক নেতা ও তার কিছু অনুসারি ফ্যাসিবাদী সরকারকে জড়িয়ে নানা কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানকে ঘিরে অটোয়ায় নবনিযুক্ত হাইকমিশনার, একজন পেশাদার কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের সুনাম বিনষ্ট করছেন। যা টরন্টোয় বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। তাদের এই অশুভ তৎপরতা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের দূতদের সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির দূরত্ব আরও বেড়ে যাবে। বিগত দিনের মতো কোনো হাইকমিশনার প্রবাসীদের ডাকে সাড়া দেবে না। এই অনুষ্ঠানে কারা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, কারা বক্তব্য দিয়েছেন, কারা আয়োজক ছিলেন, সবই ছবি ও ফুটেজ দেখলেই যে কারো প্রতীয়মান হবে যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি মহল তাদের প্রভাব বিস্তারে অপপ্রচার করে যাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। নিজ দলের আয়োজক ও উপস্থিত নেতাদের সমালোচনা করতে না পেরে ক্ষমতার প্রভাব দেখাতে হাইকমিশনারের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রবীন ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর সভাপতি ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি, প্রবীন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর সাবেক সভাপতি ও কানাডা পশ্চিম বিএনপির নির্বাহী সভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী, কানাডা পশ্চিম বিএনপির সভাপতি ও ভোরের আলো সম্পাদক আহাদ খন্দকার, কানাডা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল আজাদ, কানাডা জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ডা. এ এস এম নুরুল্লাহ তরুণ, কমিউনিটির অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যরিস্টার আরিফ হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর প্রেসিডেন্ট জাকির খান, পিডিআই কানাডার সভাপতি আফসর ফেরদৌস, এনআরবি টিভির সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু, প্রবাসী টিভির বার্তা সম্পাদক দীন ইসলাম, কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আনোয়ার দোহা, গিয়াস উদ্দিন, সুনামগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব টরেন্টোর প্রেসিডেন্ট প্রফেসর আতাউর রহমান, মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশন অব টরেন্টোর প্রেসিডেন্ট লায়েকুল হক চৌধুরী, কুয়েট অ্যাসোসিয়েশন অব টরেন্টোর প্রেসিডেন্ট নওশের আলী, ABCAN Association of Toronto এর প্রেসিডেন্ট ফায়জুল করিম, জামালপুর অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ফারুক নুরুর রশীদ, টরেন্টো সিটি বিএনপির সভাপতি মইন চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মিসবাহুল কাদির ফাহিম, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএনপি নেতা মাহবুব চৌধুরী রনি, গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নেওয়াজ চৌধুরী সাজু, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা সাদ চৌধুরী নতুন দেশ সম্পাদক সাওগাত আলী সাগর, সিপিএ যুবায়ের আহমদ, রিয়েলেটর সাব্বির চৌধুরী লিটন, পিএসিএ পরিচালক এনামুল হক, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সহসভাপতি মকবুল হোসেন মঞ্জু, সহসভাপতি আহমদ হোসেন লনি, ইলিয়াস খান, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট বাপ্পি রহমান, বাবলু চৌধুরী, রুশু আহমেদ, ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট খসরুজ্জামান চৌধুরী দুলু, কানাডা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া চৌধুরী, অন্টারিও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবু জহির সাকিব, জাতীয়তাবাদী যুবদল নেতা আলী হোসেন, সাংবাদিক ইকবাল হোসাইন, ক্লাইমেট চ্যানেলের সঞ্জয় চাকি, শেখ আনোয়ারসহ অসংখ্য বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতারা।
‘মিট দ্য হাই কমিশনার’ অনুষ্ঠানের আয়োজক টরন্টোর বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা মিথ্যা-বানোয়াট অপপ্রচারের মাধ্যমে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি এবং কূটনীতিকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা অতীতের ফ্যাসিবাদিদের মতো হাইকমিশন ও কনস্যুলেটকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টাকারীদের বয়কট এবং নির্লজ্জ অপতৎপরতা সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখতে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মিট দ্য হাইকমিশন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষে উপস্থাপিত দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. প্রবাসী বাংলাদেশি কানাডিয়ানদের নো-ভিসা প্রাপ্তি পূর্বের ন্যায় অবিলম্বে সহজতর করা হোক। এক্ষেত্রে ২০২২ সালের আগের পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। পূর্বের কানাডিয়ান পাসপোর্টে নো-ভিসা সিল বা স্টিকার থাকলে পুনরায় তাদের নতুন কানাডিয়ান পাসপোর্টে সিল বা স্টিকার দিতে কোনো বিপত্তি বা হয়রানি করা যুক্তিযুক্ত নয়।
২. অনলাইনে দুতাবাস সেবা সহজ করতে হবে। সার্ভার সার্বক্ষণিক এক্সেস এবং অফিস চলাকালীন সার্বক্ষণিক ফোন সার্ভিস অবশ্যই চালু রাখতে হবে। অনলাইনের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ম্যানুয়াল পদ্বতিতেও আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩. পাসপোর্ট নবায়ন এবং নতুন পাসপোর্ট, বার্থ সার্টিফিকেট আবেদন/প্রাপ্তি সহজ করা হোক। জটিল আবেদন পদ্ধতি পরিবর্তন করে আবেদন ফরম সহজ করা হোক। যাহাতে যে কেউ বাসায় বসে আবেদন ফরম পূরণ করতে পারে। বর্তমান আবেদন পদ্ধতি খুবই জটিল হওয়ায় অনেকের পক্ষে নিজে আবেদন করা সম্ভব হয় না।
৪. ১৮ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের (মাইনর) যাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, তাদের জন্য মা বাবার পাসপোর্ট রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত করতে হবে। বার্থ সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
৫. অটোয়া দূতাবাস এবং টরেন্টো কনস্যুলেট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) প্রদানের পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। এজন্য জটিল নিয়মনীতি পরিহার করে সহজভাবে এনআইডি পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৬. সহজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সত্যায়িত করতে হবে। দেশে থাকা প্রবাসীদের সম্পদ সুরক্ষায় হাই কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার মনোভাব রাখতে হবে।
৭. দূতাবাসের তরফ থেকে প্রতি ৩ মাস অন্তর নিয়ম করে কানাডার বিভিন্ন স্টেটে কনস্যুলার সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
৮. ঢাকা এয়ারপোর্টে ‘ভিসা অন এ্যরাইভেল’ সাধারণত এক মাসের জন্য দেয়া হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সেখানে ৩ মাস থেকে ৬ মাস ‘ভিসা অন অ্যারাইভেল’ দেওয়া হোক।
৯. অটোয়া দূতাবাস ও টরেন্টো কনস্যুলেটে বয়স্ক এবং স্বল্প শিক্ষিত কানাডিয়ানদের জন্য ম্যানুয়েল কাউন্টার চালু করা হোক। প্রয়োজনে জনবল বাড়াতে হবে।
১০. হাইকমিশন ও কনস্যুলেটে জাতীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতীতের ন্যায় ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির তালিকা’ পরিহার করে বাংলাদেশি কমিউনিটির সকল শ্রেণিপেশার নেতৃস্থানীয় ও প্রবীণ সম্মানিত নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানানো নিশ্চিত করতে হবে।
১১. বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের সঙ্গে সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক আচরণ করতে হবে। সকল ধরণের রূঢ়/অশোভন আচরণ পরিহার, হয়রাণী, অনিয়ম, চুরি এবং ল্যাগেজ হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের টিকিট প্রাপ্তি সহজিকরণ, যাতায়াতে বিমানকে অগ্রাধিকার দিতে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধকরণ, আন্তর্জাতিক অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া কমিয়ে পুনঃনির্ধারণ ও সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। বিমানকে লাভজনক করতে লন্ডন রুটের মতো বিমানের ফ্লাইট টরন্টো-সিলেট-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট-টরন্টো করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
১৩. অসচ্ছল প্রবাসীদের মরদেহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমানে বিনা খরচে দেশে পরিবারের কাছে পাঠানোর (যদি কোনো পরিবার আগ্রহ প্রকাশ করে) ব্যবস্থা করতে হবে। যা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিদায় হয়েছে, এখন অতীতের সকল ফ্যাসিস্ট সিস্টেমকে ‘সংস্কার’ করতে হবে। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেটে অতিপ্রয়োজনীয় সেবা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানে কঠোর ও জটিল নিয়মনীতির বেড়াজালে চরম হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেহেতু সেবা সহজীকরণ এবং নিয়মনীতির নামে তৈরি কালাকানুন সংস্কারে অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করা জরুরি প্রয়োজন বলে প্রবাসীরা মনে করছে। এই মতবিনিময় সভা থেকে টরেন্টো প্রবাসী বাংলাদেশিরা হাইকমিশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে ‘বহির্বিশ্বে সকল বাংলাদেশ দূতাবাসে সেবার নিয়মনীতি সংস্কারে একটি কমিশন’ গঠনের জোর দাবি জানান। এই কমিশনের কর্মপরিধিতে বিমানবন্দর ও বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী সেবাও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে প্রবাসীদের যথাযথ সম্মান, মর্যাদা ও সেবা নিশ্চিত এবং সকল ধরণের হয়রানি বন্ধের স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন