অস্ট্রেলিয়ায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার (১ সেপ্টেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া শাখা ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে মেলর্বোনে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সিডনি থেকে টেলি কনফারেন্সে বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়া বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হায়দার আলী, মেলবোর্ন বিএনপি নেতা সামসুল আরেফিন বিপুল, তৌহিদ পাটোয়ারী, মোহাম্মদ আলমগীর কবির চৌধুরী, মেলবোর্ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খাইরুল সাদমান ও মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক ছাত্রনেতা, অস্ট্রেলিয়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং ভয়েস ফর বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়াস মাহমুদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অস্ট্রেলিয়া ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মোহাম্মদ।
আয়োজনেই শুরুতেই বাংলাদেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষকে সহযোগিতার আহ্বান করা হয়। একইসঙ্গে সিডনির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলামের রোগমুক্তির জন্য সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মেলবোর্ন বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি, সমাজসেবক জালাল আহমেদ কুমু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার পেছনে যে অবদান রয়েছে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপি ও তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছে। স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের কাছে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। যাতে নাগরিকরা তাদের নেতা তার জীবন ও কর্মের প্রকৃত চিত্র জানতে পারে।
কায়াস মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, গণতন্ত্রকামী মানুষের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিগত ৪৬ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি এবং আমার রাজনৈতিক সহকর্মীরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন কর্মী হিসেবে গর্ববোধ করি এই ভাবনায়, এই আকাশছোঁয়া কাজের পরিধিতে আমরা বহির্বিশ্ব থেকে ক্ষুদ্রতম অবদান রাখতে পেরেছি। আজ এই নতুন দিগন্তে আমরা একটি সুস্থ এবং মুক্ত পরিবেশে গণতন্ত্রের চর্চা করতে পারছি। গণতন্ত্রের এই স্বাধীনতা অর্জনে যারা বিগত ১৬ বছর ধরে নিদারুণ অত্যাচার, অন্যায়-নিপীড়ন সহ্য করে, মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে পরিবার ও বাসস্থান ছাড়া হয়েছিলেন তাদের প্রত্যেককে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
‘সেইসঙ্গে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের উৎখাতে সম্প্রতি ছাত্র-জনতার রক্তঝরা আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, সেসব শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবার যাতে দ্রুত স্বজন হারানোর বেদনা কাটিয়ে উঠতে পারে ও ন্যায় বিচার পায় তার জন্য মহান আল্লাহ্র কাছে আমরা দোয়া করি। পাশাপাশি সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলের বন্যায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা। এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের সহযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময় বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের পাশে রয়েছে। তারা বন্যাকবলিত এলাকাতে সাহায্য সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেবার দায়িত্বও নিরলসভাবে পালন করে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
কায়াস মাহমুদ আরও বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমানের হাতেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিরাপদ। বর্তমানে বিভিন্ন কুচক্রীমহল নানাভাবে বিএনপিকে হেয় করে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমাদেরকে এইসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ করতে হবে। দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে আমাদেরকে ভাল কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে হবে। সবাই যদি আমরা একসাথে কাজ করি তাহলেই সম্ভব বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠা করা।
এ সময় কায়াস মাহমুদ বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সফল রাষ্ট্রনায়ক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
সর্বশেষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। পরে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। পরে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দলের হাল ধরেন তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দলের চেয়ারপারসন। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিএনপির অগ্রণী ভূমিকা গণমানুষের কাছে সব সময়ই সমাদৃত হয়েছে।