সাংবাদিকতা নিয়ে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে সেটিকে সংবিধান পরিপন্থি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হওয়া মানে গোটা ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ নয়। এ ঘটনায় বিবৃতি দেওয়ায় প্রমাণিত হয়েছে- পুলিশের আরও অনেক কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের দুর্নীতির খবর চাপা দিতে এ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে স্কাউট মার্কেটে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট কার্যালয়ে সংগঠনের উদ্যোগে এক দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন রিজভী।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আশু রোগ মুক্তি কামনায় এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পরে অসুস্থ বেগম জিয়ার আরোগ্য কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুর্নীতির কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। তাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের দুর্নীতির কেচ্ছা-কাহিনী সবার সামনে বেরিয়ে আসছে। দেশের জন্য লাখ লাখ গণতন্ত্রকামী মানুষ জীবন দিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন বেনজীর-আসাদুজ্জামানদের জন্য, আওয়ামী লীগের এমপিদের জন্য। প্রশাসনের ব্যক্তিরা এই সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় রাখার জন্য যা খুশি তাই করছে।
তিনি বলেন, এক রাজস্ব কর্মকর্তার ছেলে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাগল কিনছে। তিনি এক মন্ত্রীর পিএস ছিলেন। যত গুরুত্বপূর্ণ পদ দরকার তিনি পেয়েছেন এবং তিনি সেগুলো ব্যবহার করছেন। তার স্ত্রীর নামে বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি এক জেলায়, আরেক জেলায় আরেক স্ত্রীর নামে অনেক সম্পত্তি করেছেন। কার নামে কত সম্পত্তি রাখবেন এই লোক তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। আজকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতির নানা কাহিনি ভয়াবহ আরব্য উপন্যাসের মতো বেরিয়ে আসছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যেখানে সাধারণ মানুষ জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে দুর্নীতিবাজদের ছেলেমেয়েরা রাজকীয় জীবনযাপন করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য বেনজীর, আসাদুজ্জামানরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম করেছে, রাতের অন্ধকারে এরা নির্বাচন করে দিয়েছে। তার প্রতিদান হিসেবে এখন জমি দখল করে, গরিব মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে টাকার পাহাড় গড়ছেন। এতে এই সরকার খুশি। কারণ তারা তাদেরকে ক্ষমতার টিকিয়ে রাখছে।
সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুইঁয়ার সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, সালাউদ্দিন শিশির, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, বিএনপি নেতা বেলাল উদ্দিন সরকার তুহিন, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এর আগে সকালে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের নিচতলায় মহিলা দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল হয়। সেখানে রিজভী অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে খাবারের মধ্যে নানা রকমের ওষুধ মিশিয়ে অসুস্থ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, তাকে তিলে তিলে শেষ করা। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রুমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর নার্গিস, উত্তরের আহ্বায়ক নায়েবা ইউসুফ, সদস্য সচিব রুনা লায়লা রুনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বাদ জোহর একই স্থানে স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল হয়। সেখানে রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সরকারের ভয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহযোগিতা না দিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অমানবিক আচরণ করেছে। এ দেশের সাধারণ মানুষ যদি এখন এই হাসপাতালের ইট খুলে নিয়ে যায়, তাদের করার কিছু থাকবে না। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় এতে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াসিন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন