সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলন ব্যর্থতায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিলুপ্ত করা হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। তবে বিলুপ্তকৃত কমিটির নেতারা এটাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি স্বাভাবিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটা করেছেন। আগামীতেও তিনি যে সিদ্ধান্ত নিবেন, সে অনুযায়ী তারা কাজ করবেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
২০২১ সালের ২ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক এবং দলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, শিগগিরই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে নতুন আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে, যেটা হবে তারুণ্যনির্ভর। দীর্ঘদিন ধরে বয়স্করা মহানগরের নেতৃত্ব দিলেও এবার তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে চান হাইকমান্ড। ফলশ্রুতিতে দুই মহানগরেই সভাপতি পদে নতুন মুখ আসতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি পদে বিদায়ী কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ পদে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে নীরব কারাগারে থাকায় তার সম্ভাবনা কম বলে অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের নাম আলোচনায় রয়েছে। এদের বাইরে বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য তাবিথ আউয়ালের নামও শোনা যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণে রফিকুল আলম মজনুকে সভাপতি এবং বিদায়ী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিনকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে শীর্ষ পদে দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হামিদুর রহমান হামিদ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিব এবং সদ্য বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ইশরাক হোসেনের নাম আলোচনায় রয়েছে। মহানগর রাজনীতিতে হামিদের দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার রয়েছে। তবে তিনি ক্ষুদ্র একটা গ্রুপ মেইনটেইন করায় মহানগরে তার প্রভাব তেমন জোরালো নয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বর্তমানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তাকে পদোন্নতি দিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে।
বিএনপি কর্তৃক দলের মহানগর দক্ষিণ শাখার কমিটি বিলুপ্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, কমিটি গঠন-পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটি সাংগঠনিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিএনপি একটি বিশাল সংগঠন। দলের একেক জায়গায় দায়িত্ব পালন করার মতো অনেক নেতা আছে।
তিনি আরও বলেন, মহানগর বিএনপিতে তিনি নানা সময় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহানগর কমিটিতে এক সময় যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন, মেম্বার সেক্রেটারি ছিলেন, সেক্রেটারি ছিলেন। সর্বশেষ তাকে আহ্বায়ক করা হয়। দল আগামীতে তাকে আবার কোথাও না কোথাও দায়িত্ব দিবে। যেখানেই দায়িত্ব দিবে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন তিনি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির ঘটনাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন বিদায়ী কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক। তিনি কালবেলাকে বলেন, কমিটি গঠন-পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাছাড়া মহানগর উত্তরের কমিটির মেয়াদ প্রায় তিন বছর হয়ে গিয়েছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। উনি জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই নতুন কমিটি দিয়ে দিবেন। এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
বিদায়ী কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হকের নতুন কমিটিতে সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এমন সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিবেন, সেটাই তাদের জন্য শিরোধার্য। তারা সে অনুযায়ীই কাজ করবেন।
মন্তব্য করুন