বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, রাজপথের আন্দোলন দিয়ে বিজয় আসে। কিন্তু এজন্য অনুঘটক থাকতে হয়। বাংলাদেশে সেই অনুঘটক এ মুহূর্তে অনুপস্থিত। কারণ অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করে হয় আদালত, না হয় সিভিল অফিসার যারা সচিবালয়ের, না হয় করে উত্তরপাড়ার আমাদের ভাইরা, না হয় করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত ১৫ বছরে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেখ হাসিনা দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। এই কারণে আন্দোলনের বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও কিন্তু আমাদের হোঁচট খেতে হয়েছে। কারণটা সবার বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
সোমবার (১০ জুন) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মৎস্য খাতে শহীদ জিয়ার অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর আক্রমণ না আসলে অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত। আক্রমণ আসলে সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। কারণ যে গাছে কোনো ফল নেই। সেই গাছে কেউ ঢিল মারে না। আর যেই গাছটা বেশি বড় ওই গাছটায় কিন্তু ঝড়-বাতাস, ঠান্ডা সবচেয়ে বেশি। বিএনপি হচ্ছে একটা ফলবান গাছ। ফল দিয়ে আসছে, যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দিবে। এই গাছের ওপর যদি আক্রমণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগকে মনে রাখবে কে? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নামে যে আরেকটা দল আছে সেটা মনে করবে কে? এ জন্য আমাদের সমালোচনা যত বেশি হবে আমরা যেন আনন্দিত হই এবং সেগুলোর তথ্যভিত্তিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। দালিলিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। এটাই হচ্ছে এই মুহূর্তের মূল কাজ। এটাই হচ্ছে আন্দোলন।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র এবং সরকার দুইটা আলাদা জিনিস। রাষ্ট্র হলো আলাদা চিরন্তন স্বত্তা। যেটা আমার এবং আমার পরবর্তী প্রজন্মের এবং আমার পূর্বের প্রজন্মের বহু চলে গেছে, এখন যাবে এবং ভবিষ্যতেও চলে যাবে কিন্তু রাষ্ট্রটা থাকবে। তবে সরকার হলো নির্ধারিত ৫ বছরের জন্য। সেই সরকার যদি রাষ্ট্রের সঙ্গে একাকার হয়ে যায় তাহলে সেই রাষ্ট্রের আর কোনো আলাদা অস্তিত্ব থাকে না। যেটার সবচেয়ে বড় ভিক্টিম আজকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি এবং তার অঙ্গ-সংগঠনগুলো। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে যে কাজ সেটি জিয়াউর রহমান সাহেব শুরু করেছিলেন। তার সেই কাজগুলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যেটা প্রয়োজন তা হলো শুধু জিয়াউর রহমানকে স্মরণ নয়, জিয়াউর রহমানকে যেন ধারণ করি। সেখানে কে থাকল কে থাকল না সেটা বিবেচ্য নয়। এটা করতে পারলেই কিন্তু বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী নেতৃত্ব পাবে। কেন না স্মরণ এবং ধারণের মধ্যে যোজন যোজন পার্থক্য আছে। স্মরণ অনেক সময় আনুষ্ঠানিকও হতে পারে। আর ধারণ করাটা হলো হৃদয় থেকে ভালোবাসা। যেমন জিকির-আজকার করতে হলে অজু করা লাগে না। কিন্তু কোরআন তিলাওয়াত করতে গেলে অজু করা লাগে।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম হাফিজ কেনেডি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সেলিম মিয়া, জাকির হোসেন খান, ওমর ফারুক পাটোয়ারি, শাহ আলম, জাহাঙ্গীর আলম সনি, কবির উদ্দিন মাস্টার, আবুল বাশার, তরিকুল ইসলাম মধু, আমির হোসেন, শাহ আলম, বাকি বিল্লাহ, কে এম সোহেল রানাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য করুন