আগামী অর্থবছরের এই জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও দেশ থেকে পাচারকৃত টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। বাজেটকে জনবান্ধব করতে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সোমবার (১০ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় যে কথা বলেছি তার পুনরাবৃত্তি করে বলতে চাই বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট মোচনে বাজেট প্রস্তাবনা বিশেষ কোনো আশা জাগাতে পারেনি। এটা ঠিক যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে বাজেটের আকার নির্ধারণে অর্থমন্ত্রী সংযম প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই বৈশ্বিক বাস্তবতায় ভারত ও শ্রীলংকা মূল্যস্ফীতি অনেক নীচে নামিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ কেন ব্যর্থ হয়েছে তা বলেননি। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও, এমনকি বর্তমান অর্থনীতির বাস্তবতার কারণে যে আইএমএফ-এর কাছে সরকার দ্বারস্থ হয়েছে তার কথাও তারা মানেনি। আমরা গত দুই বাজেটের সময় যে কথা বলেছি, তার পুনরাবৃত্তি করে বলতে চাই রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে যে অলিগার্কির হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত তাদের স্বার্থে রক্ষার্থেই সমস্ত অর্থনৈতিক নীতি পরিচালিত হওয়ায় কেবল মূল্যস্ফীতিই নয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে লুট ও নৈরাজ্য, ঋণখেলাপির বিশাল পাহাড় জমেছে। এসব কোনো ক্ষেত্রেই কার্যকর নীতিও ব্যবস্থা না গ্রহণ করার যে রীতি চলে এসেছে তাই এই বাজেটেও পরিলক্ষিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় আমরা একটি আশা জাগানীয়া সাহসী বাজেটে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় যে কথা বলেছি তার পুনরাবৃত্তি করে বলতে চাই, বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট মোচনে বাজেট প্রস্তাবনা বিশেষ কোনো আশা জাগাতে পারেনি। এটা ঠিক যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে বাজেটের আকার নির্ধারণে অর্থমন্ত্রী সংযম প্রকাশ করেছেন তবে বাজেট পরিকাঠামে নির্ধারণ করতে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রীর পথ ধরেই। এ ক্ষেত্রে বাজেটে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে মূসক ছাড় দেওয়া হয়েছে- যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থাপনা না থাকাই এর প্রভাব বাজারে কতটা পড়বে তা দেখার বিষয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা মিডিয়ার কল্যাণে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে সাবেক পুলিশ ও সেনা প্রধানের দুর্নীতি সম্পর্কে অবগত হয়েছি, সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ কিন্তু হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই দুই দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগ দেখিনি। আর বাজেট প্রস্তাব অনুসারে এই ব্যক্তিরা তাদের ‘অপ্রদর্শিত আয়’ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পাবে। এটা মোটেও কাম্য না।এই অবস্থায় বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট মোচনে অর্থনীতির উল্লিখিত অসংগতিসমূহ দূর করতে সবাইকেই এগিয়ে আসতেই হবে। জনস্বার্থে সংগঠিত উদ্যোগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থপাচার রোধ, ব্যাংকিংখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সর্বোপরি ঋণ খেলাপির পাহাড় কমিয়ে আনতে আর্থিক ক্ষেত্রে দুষ্কর্মের হোতাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
মন্তব্য করুন