জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে ঋণনির্ভর, অবাস্তব ও গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে সমমনা ইসলামী দলসমূহ।
নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমমনা ইসলামী দলসমূহের এক বৈঠকে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বিশাল ঘাটতি বাজেটে সাধারণ জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না। সেইসঙ্গে সিন্ডিকেটের কারণে হাজার হাজার বিদেশগামী শ্রমিক লাখ লাখ টাকা খরচ করে এবং ভিসা পেয়েও মালয়েশিয়া যেতে পারেনি তার দায় সরকারকে নিতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের বিচার করতে হবে।
শুক্রবার (৭ জুন) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অংকের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যা বাজেট ব্যয়ের ২২ ভাগ। এখন বাজেট ব্যয়ের বৃহত্তম খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ। পরিচালন ব্যয় ও সুদ পরিশোধের মতো অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বাজেটের অধিকাংশ অর্থ। আর প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবসম্মত নয়। এ বাজেটে জাতীয় ঋণের বোঝা আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রদত্ত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেশে ঘুষ-দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ তলানিতে গিয়ে ঠেকার উপক্রম হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। প্রস্তাবিত এ বাজেট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কোনো ভূমিকা রাখবে না, বরং নতুন করে বহু জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।
নেতারা আরও বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে জনগণের ভোটবিমুখতা সরকারের প্রতি জনগণের অব্যাহত অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমদ ভয়াবহ দুর্নীতি করে কীভাবে নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমালো সরকারকে জাতির কাছে তার জবাবদিহিতা করতে হবে।
নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি সারোয়ার কামাল আজিজীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মুসা বিন ইজহারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর আহমদ আলী কাসেমী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমদ, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মুস্তাফিজুর রহমান মাহমুদী, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জাফল হোসেন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির দপ্তর সচিব দ্বীনে আলম হারুনী, প্রচার সচিব আবদুল্লাহ আল মাসউদ, সহকারী অর্থ সচিব আনোয়ারুল কবির প্রমুখ।
বৈঠকে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনা, মূল্যস্ফীতি রোধ ও প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত মোবাইলে কথা বলার উপরসহ সব ধরনের বর্ধিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
মন্তব্য করুন