ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় মামলা করেছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
বুধবার (২২ মে) রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলাটি করেন তিনি।
মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, নিহত সংসদ সদস্যের মেয়ে এই হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এখন তদন্তপূর্বক আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এর আগে, বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে বাবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করতে শেরেবাংলা নগর থানায় যান নিহত এমপি আনারের কন্যা মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন। ওই সময় তার সঙ্গে আরও একজন ছিলেন।
তার আগে, দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে যান এমপি আনারের কন্যা। পরে সেখানে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। সাংবাদিকদের মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, আজ আমি এতিম হয়েছি, যার বাবা থাকে না তার কেউ থাকে না। বাবার সঙ্গে আমার ভিডিও কলে সর্বশেষ কথা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে- আমি সেটা দেখতে চাই। আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। তবে আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের আমি দেখতে চাই। এ সময় বাবার হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
এদিকে, এমপি আনারের হত্যার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এমপি আনোয়ারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে বিস্তারিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাতে পারবে। আমরা আমাদের মিশনের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। আমাদের মিশনও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে।
তিনি বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যার ঘটনা খুবই দুঃখজনক, মর্মান্তিক, অনভিপ্রেত। বিষয়টি তদন্তাধীন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এটা একটা পরিকল্পিত হত্যা।
এদিন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব রয়েছে। তারা আমাদের সব ধরনের কোঅপারেশন করছে। ভারত সরকারের যতটুকু দায়িত্ব তা তারা করছে। সম্পর্কের ফাটল ধরবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারণ এই ঘটনায় ভারতের কেউ জড়িত নয়। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে ইনফরমেশন তাতে আমাদের দেশের মানুষই এ হত্যার সঙ্গে জড়িত।
এর আগে এমপি মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম চিকিৎসার জন্য ১২ মে ভারত গিয়েছিলেন। ভারতে যাওয়ার দুদিন পর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে তার মেয়ে আমাদের জানালে আমাদের পুলিশ ইন্ডিয়ান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। আমরা আজকে সকালবেলা নিশ্চিত হয়েছি, ভারতীয় পুলিশ জানিয়েছে যে, তিনি খুন হয়েছেন। ভারতের পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খুনের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে ধরা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমাদের তদন্ত চলছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন ঝিনাইদহ সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা, সীমান্ত এলাকা। আনোয়ার সাহেব ওই এলাকা থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পরে এই ঘটনাটি ঘটে। আমাদের পুলিশ এটা নিয়ে তদন্ত করছে। এই খুনের মোটিভ কী ছিল তা আমরা অচিরেই জানাতে পারব। ভারতের পুলিশ আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে সে তথ্য অনুযায়ী, তিনি কলকাতার একটি বাসায় পরিকল্পিতভাবে খুনের শিকার হয়েছেন। খুনের মোটিভ নিয়ে আমাদের পুলিশ ও ভারতীয় পুলিশ কাজ করছে। ইন্টারন্যাশনাল ওয়েতে আমাদের যতটুকু করা দরকার তার সবই আমরা করছি।
উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টিভি নাইন বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ মে কলকাতায় যান আনার। একজন অফিসারের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন। বরানগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আজিম তার নাম গোপাল বিশ্বাস। গত ১৩ মে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে ওঠেন আজিম। তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন