সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন দাবিতে আগামীর আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে একমঞ্চে চায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম মিত্র ১২ দলীয় জোট। তাদের পরামর্শ, বিএনপির বাইরে সাংগঠনিকভাবে জামায়াত শক্তিশালী। তাই মাঠের আন্দোলন সফল করতে হলে জামায়াতসহ বাম-ডান ও ইসলামী ঘরানার সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে।
তারা বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগে একমঞ্চ থেকে আন্দোলন পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আমরা তখন একমঞ্চে প্রায় চলেও এসেছিলাম। কিন্তু যুগপতেরই দুএকটি শরিক দল ও জোটের বিরোধিতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ২৮ অক্টোবর জামায়াতও মাঠে ছিল। কিন্তু পৃথকভাবে তারা কর্মসূচি করেছে। ওইদিন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
রোববার (১২ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে তাদের এমন পরামর্শ দেন ১২ দলের কয়েকজন নেতা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর একদফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও যুগপৎভাবে কোনো কর্মসূচি মাঠে গড়ায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে মিত্রদের পরামর্শ নিতে তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এ দিন ১২ দলের পর একই স্থানে এলডিপির সঙ্গেও বৈঠক করেছে দলটি।
গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর ১২ ও ১৩ জানুয়ারি যুগপতের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের ভার্চুয়ালি সিরিজ বৈঠক হয়। যেটাকে তখন বিএনপি ও শরিকদের পক্ষ থেকে ‘সৌজন্য বৈঠক’ বলা হয়েছিল। সেখানে সরকারি নানামুখী চাপ ও প্রলোভন সত্ত্বেও নির্বাচনে না যাওয়া এবং যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত রাখায় বিএনপির পক্ষ থেকে মিত্রদের সাধুবাদ জানানো হয়। এরপর মিত্রদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের নতুন কী কর্মসূচি নেওয়া যায়- সে ব্যাপারে ১২ দল নেতাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়। তখন জোটের কয়েকজন নেতা নির্বাচন বর্জন করে যুগপৎ কিংবা যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা সবাইকে নিয়ে ঈদুল আজহার পর ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার পরামর্শ দেন। এ সময় বিক্ষিপ্তভাবে দুএকজন নেতা ঢাকায় একমঞ্চ থেকে সমাবেশ এবং ঢাকার বাইরে সব মহানগরে একই আদলে সমাবেশের মতো কর্মসূচির প্রস্তাব করেন।
তবে কেউ কেউ বলেন, কোনো কারণে একমঞ্চ সম্ভব না হলে যুগপতের পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া ভারতীয় পণ্য বর্জনের ক্যাম্পেইন আরও জোরালো করারও প্রস্তাব দেন জোটের কেউ কেউ। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলা হয়, আমরা সীমান্তে হত্যা নিয়ে কর্মসূচি দিতে পারি। তা ছাড়া মিয়ানমারও এখন আমাদের জন্য থ্রেট। মিয়ানমার সীমান্তেও প্রতিনিয়ত ঝামেলা হচ্ছে। তাই শুধু একটি ইস্যুতে সীমাবদ্ধ না থেকে বৃহৎভাবে আগ্রাসনবিরোধী কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, সেটা নিয়ে ভাবা যেতে পারে। এ জন্য ১২ দলকে প্রয়োজনে সময় নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলে বিএনপি।
বৈঠকে বিএনপি নেতারা জানান, যুগপতের সব শরিকদের মতামতগুলো নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিতে পর্যালোচনা শেষে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১২ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। এটা আমাদের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। আমরা মাঝে মাঝেই বসি, আলোচনা করি। দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে মানুষের দুর্ভোগ, দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা, দুর্নীতি-অনাচার, সীমান্ত সংকট, সীমান্তে মানুষ হত্যা, সীমান্তে অনুপ্রবেশসহ নানা বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার কালবেলাকে বলেন, আগামীতে আন্দোলন কীভাবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা চেয়েছে। আমরা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করব।
জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। মানুষ এ অবস্থার পরিবর্তন চায়। এ অবস্থায় যুগপৎ আন্দোলনকে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কীভাবে সেটা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খুব শিগগিরই ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হবে। এ নিয়ে আবারও বৈঠক হতে পারে। তারপর আমরা যুগপতের অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।
জোটের শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান কালবেলাকে বলেন, আগামীর আন্দোলনের কী কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি আমাদের কাছে কর্মসূচি চেয়েছে। ঈদের আগে আবার বৈঠক হতে পারে। ঈদের পর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষে নজরুল ইসলাম ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জোট নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মওলানা আবদুল করিম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবু হানিফ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন