‘দেশে আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষ চলছে’ এমন মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলের নেতা জি এম কাদের বলেছেন, সরকারি হিসাবেই দেশের প্রায় ২৬ ভাগ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই বিশাল অংশ ধার করে খাবার ক্রয় করছে। খাদ্যদ্রব্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ১ থেকে দেড় কোটি পরিবার বা ৪ কোটি মানুষ এমন বাস্তবতায় মোকাবিলা করছে। যারা পরিবারভুক্ত নয় তারা এই হিসাবের বাইরে। তারা বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করছে খাবার কিনতে।
বুধবার (২০ মার্চ) জাপা চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারই স্বীকার করছে প্রায় ৪ কোটি মানুষের খাদ্যক্রয় ক্ষমতা নেই একথা উল্লেখ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ এখন আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত। যারা ধার পরিশোধ করতে পারে, তাদেরই মানুষ ধার দেয়। প্রায় চার কোটি মানুষ খাদ্য কিনতে ধার করছে কিন্তু হতদরিদ্ররা তো কারও কাছে ধার পায় না, তারা কী তিন বেলা খেতে পাচ্ছে? যারা কারও কাছে ধার পায় না, এমন অন্তত আরও ১০ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, অথচ সরকার বলে বেড়ায়- দেশে নাকি রুগণ মানুষ দেখা যায় না। এটা কী সত্য কথা? আমাদের বেশির ভাগ মানুষ অর্থ কষ্টে আছে। সরকার যদি না বোঝে দেশের মানুষ কষ্টে আছে, তাহলে সমাধান হবে কীভাবে? মানুষ যখন মোটেও খাদ্য কিনতে পারবে না, না খেয়ে মারা যাবে- সে অবস্থা এখনো আসেনি। তবে, সে দিকেই তো দেশ যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টি যখন দেশ পরিচালনা করেছে তখন বিরোধীদের ওপর কোনো অন্যায় হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে আদালতে গেলেই সবাই ন্যায় বিচার পেয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনীতিতে শক্তিশালী হয়ে আমাদের দল নষ্ট করতে চেষ্টা করছে। এরশাদ কখনোই দলীয়করণ করেননি, তাই তার কোনো গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়নি।
কাদের বলেন, কোনো দল তাদের নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে টিকতে না পারলে সামনের দিকে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অস্বাভাবিক রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই স্বাভাবিক রাজনীতি চলতে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বিরোধীদলকে কাজ করতে দেওয়া সরকারেরই দায়িত্ব।
এসময় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যারা বলছেন, জাতীয় পার্টি ভেঙে যাচ্ছে- তারা ভুল বলছেন। জাতীয় পার্টি ভেঙে যাচ্ছে না। রাজনীতি হচ্ছে একটি চলন্ত ট্রেনের মতো। চলার পথে কেউ নেমে যাবে আবার কেউ নতুন করে উঠবে, এভাবেই রাজনীতি চলছে। আমরা গুটি কয়েক লোক চলে গেলেও জাতীয় পার্টির ক্ষতি হবে না।
এর আগে, সকালে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে কাকরাইলস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে রওশন অংশও এরশাদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
মন্তব্য করুন