সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মারামারি পরবর্তী বিষয় নিয়ে এবার ভিডিও বার্তা দিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) এক ভিডিও বার্তায় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোর্ট প্রাঙ্গণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সাংগঠনের কেউ জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যুবলীগের আদর্শ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা তুলে ধরে শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন,
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড সংগঠন। শেখ হাসিনার বাইরে এই সংগঠন অবস্থান নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, এ ব্যাপারে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যেই যুবলীগের আইনজীবীরা সমবেত হয়ে গত ৬ এবং ৭ মার্চ উৎসবমুখর পরিবেশে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। ৮ মার্চ নির্বাচন কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা যুবলীগ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ যদি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।
একইসঙ্গে সার্বিক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির অবতারণা হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
পরশ বলেন, যুবলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে মানবিক যুবসমাজ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
প্রসঙ্গ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে জয়ী হয়েছে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের প্যানেল। নির্বাচনে ভোট গণনা ও ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, অনেকের মতে—উচ্চ আদালতের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে এবার। এ নিয়ে দেশবিদেশে চলছে সমালোচনা। এসব কারণে শুধু আদালত অঙ্গন নয়, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও ব্রিবত ও চরম ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারের জন্য অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতি তৈরির পেছনে যার নাম এসেছে, তিনি সরকার পক্ষেরই আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যূথী। সমিতির নির্বাচনে সরকার সমর্থকদের আনুষ্ঠানিক প্যানেলের বাইরে সম্পাদক পদে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তিনি। ভোট গণনা ও ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তার নির্দেশেই সেদিন গভীর রাতে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। যূথীকে বিজয়ী ঘোষণা করাতে যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী জোর করে কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ উঠে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তৈরি হলে আজ এই ভিডও বার্তা দেন যুবলীগের চেরয়ারম্যান।
গত শনিবার দুপুর থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। শনিবার রাত দেড়টার দিকে ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা সাবকমিটির প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের। ঘোষিত ফলে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের মাহবুব উদ্দিন খোকন ২ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের আবু সাঈদ সাগর ২ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়েছেন। সভাপতি অন্য দুই প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ৪৬ ভোট এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান) ২২৯ ভোট পেয়েছেন। সম্পাদক পদে সাদা প্যানেলের শাহ মঞ্জুরুল হক ৩ হাজার ৩১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই পদে বিএনপি প্যানেলের মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) ১ হাজার ৭০২ ভোট পেয়েছেন। আর বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যূথী পেয়েছেন ২৬৯ ভোট। এই পদে অন্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া পেয়েছেন ৬০ ভোট। অন্য পদগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার, সহসভাপতি পদে ড. দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন, ট্রেজারার পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনছারী, সহসম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির (পল্লব) এবং সদস্যপদে রাশেদুল হক খোকন, মো. রায়হান রনী, মো. বেল্লাল হোসেন (শাহীন) ও খালেদ মোশাররফ (রিপন) বিজয়ী হয়েছেন। আর কার্যনির্বাহী সদস্যপদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম জয়ী হন।
মন্তব্য করুন