কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী কাল

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ছবি : সৌজন্য
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ছবি : সৌজন্য

বিএনপির সাবেক মহাসচিব বরেণ্য রাজনীতিবিদ মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল (১৬ মার্চ) শনিবার। ২০১১ সালের ১৬ই র্মাচ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন একজন দৃঢ়চেতা, আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের মানুষের মনে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠ থাকবেন। তিনি ছিলেন অনন্য উচ্চতায় একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তির সকল সংগ্রামে তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১/১১’র সময় দেশের এক চরম রাজনৈতিক সঙ্কটকালে বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব কাধে নিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত রুখে দিয়েছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী দর্শনকে বুকে ধারণ করে এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের অবদান দল ও দেশবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

এদিকে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপি ও খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্মৃতি ফাউন্ডেশন শনিবার বাদ যোহর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। মরহুমের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া জামে মসজিদে উক্ত অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

প্রসঙ্গত, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন (১৯৩৩-২০১১) আইনজীবী, রাজনীতিক। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার খিরাই পাচুরিয়া গ্রামে ১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। তার পিতা খোন্দকার আবদুল হামিদ ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ আলেম এবং মাতা ছিলেন আকতারা খাতুন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স), ১৯৫৩ সালে এমএ এবং ১৯৫৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে খোন্দকার দেলোয়ার বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নিবার্চনে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীর সপক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সিলেট মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি মানিকগঞ্জ মহকুমা আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পরপরই মানিকগঞ্জে গঠিত বিপ্লবী কম্যান্ড কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার।

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে গঠিত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে যোগ দেন এবং দলের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক নিযুক্ত হন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার পর খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে পুনরায় তিনি বিএনপির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য।

তিনি ১৯৭৯ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন। তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মানিকগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকা থেকে পঞ্চম (১৯৯১), ষষ্ঠ (১৯৯৬), সপ্তম (১৯৯৬) ও অষ্টম (২০০১) সংসদে সদস্য নিবার্চিত হন।

তিনি পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন সংসদীয় দলের চীফ হুইপ এবং সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী সংসদীয় দলের চীফ হুইপ ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের সভাপতি এবং বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সদস্য ছিলেন।

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি ১৯৭৬-১৯৭৮ এবং ১৯৮৪-১৯৮৫ সালে মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং ১৯৭৯-১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য ছিলেন।

তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জ খোন্দকার নূরুল হোসেন ল’ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। তার নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন কলেজ এবং পাচুরিয়া মাদ্রাসা। ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ার প্রাক্কালে তিনি দলের মহাসচিব আব্দল মান্নান ভূইয়াকে বহিস্কার করে তদস্থলে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে দলের মহাসচিব পদে নিয়োগ দান করেন।

এক-এগারোর পর যখন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা আটক ছিলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন তখন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সঙ্কটের মোকাবেলা করে দলের ঐক্য ও অখন্ডতা অক্ষুন্ন রাখেন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর পুনরায় তিনি বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকার জন্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন একুশে পদকে ভূষিত হন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১০

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১১

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১২

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৩

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৪

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৫

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৬

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

১৭

বিসিবির দুর্নীতির তদন্ত দাবি সাবেকদের

১৮

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১৯

জেল খেটেছি তবু শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাইনি : সাবেক এমপি হাবিব

২০
X