বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডামি সরকারের বাজার লুটের কারণে আজ জনগণ সর্বস্বান্ত। বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ আর অর্থ বিত্তের পুকুরে সাঁতার কাটছে সরকারের লোকজন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশকে পরিণত করা হয়েছে পৃথিবীর এক নম্বর শব্দ আর বায়ু দূষণের ভাগাড়ে। সব মিলিয়ে কেবল এই রাজধানী ঢাকা নয়, পুরো দেশটাকেই যাতনাময়—বিষাদলোকে পরিণত করেছে ভোট ডাকাতির সরকার। নিত্যপণ্যের বাজার লুটেরা মাফিয়া—সিন্ডিকেটের হাতে বর্গা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে জনগণ। মাহে রমজানকে সামনে রেখে এখন থেকেই সরকারের সিন্ডিকেট চক্র জনগণের পকেট কাটতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
রিজভী বলেন, সম্পূর্ণ একদলীয়—একতরফা ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মসনদের অবৈধ মেয়াদ প্রলম্বিত করে আরও বেপরোয়া হয়ে জনগণের ওপর নতুন মাত্রায় জুলুম চালাচ্ছে ডামি সরকার। মানুষের বেঁচে-বর্তে থাকার অধিকার, জান-মাল, মানবাধিকার, জননিরাপত্তা লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। তাদের অনঢ়তা, একগুঁয়েমী ও বৈরিতার আঘাতে গণতন্ত্র কবরে শায়িত।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের পেশিশক্তি দিয়ে বিরোধীদল দমনের অভিনব সব পন্থা বিগত দেড় দশক ধরে অব্যাহত আছে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলা করতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বাড়াবাড়ি বলপ্রয়োগ, একই সময় ক্ষমতাসীন দলের পালটা কর্মসূচি সংঘাতময় বিভীষিকার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের ভেতরে বাংলাদেশকে নিপতিত করা হয়েছে। মানুষ আর সইতে পারছে না। অসহায় মানুষের বুকফাটা কান্নার শব্দ এই লুটপাট টাকা পাচারে ব্যস্ত সরকার শুনতে পাচ্ছে না। গ্যাস নাই, চুলা ঠান্ডা, রাস্তায় যানজট, বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং, পুতি-দুর্গন্ধময় ওয়াসার ময়লা পানি, বাজারে আগুন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়াসহ নিত্যপণ্যের দাম আওয়ামী সিন্ডিকেট লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সভ্যতার জন্য বৈরী সংগঠন ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছে নারীর শ্লীলতাহানিসহ সন্ত্রাস আর নৈরাজ্যের অভয়ারণ্য। সব বিশ্ববিদ্যালয় এখন রক্তাক্ত এবং নারীদের জন্য বিপজ্জনক স্থান। সরকারি দলের প্রশ্রয়ে শহর-নগর-বন্দর-জনপদে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, হামলা ও খুনাখুনিতে মানুষ আতঙ্কিত।
রিজভী আরও বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি, উলটো গত ১০ দিনে রমজানসংশ্লিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। শুল্ক কমানোর পরে ওই ৪টি পণ্যের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমার কথা কিন্তু কমেনি তো বটেই বরং এই ৪টি পণ্যের দাম কেজিতে ১০/২০ টাকা বেড়ে গেছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হতো। এখন খুচরা বাজারে খোলা চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখনও সেই দরে কিনতে হচ্ছে চিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বছরের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। যেমন গত বছর এই সময়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। অর্থাৎ দাম বেড়েছে তিন গুণের বেশি। একই অবস্থা মাংস ও মাছের বাজারেও।
রিজভী বলেন, গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশে বিএনপি সবচেয়ে বড় উগ্রবাদী দল। দেশে উগ্রবাদের জন্ম বিএনপির হাত ধরে। সরকার আত্মশক্তিতে বলীয়ান।’ আসলে ওবায়দুল কাদের সাহেবের কিছু বলার আর করার কিছু নেই। তিনি আওয়ামী লীগের জড়পদার্থে পরিণত হয়েছেন। যেভাবে চালানো হয় তিনি সেভাবেই চলেন। যে দেশে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের অস্তিত্ব থাকে সে দেশে উগ্রবাদ খুঁজতে যাওয়া মূর্খের স্বর্গে বাস করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ডা. আবদুল কুদ্দুস, সহ দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, কাজী রফিক, বিএনপি নেতা অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল প্রমুখ।
মন্তব্য করুন