বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য (রুকন) সম্মেলনে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা। এই সরকারকে রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নেতারা বলেছেন, আমরা সব নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি। এ জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের মাধ্যমে আমরা সব হত্যার রক্তের বদলা নিব।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের বাক-স্বাধীনতাসহ ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করেছে। ফ্যাসিবাদের জুলুম-নির্যাতন মোকাবিলা করে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, যুগে যুগে যারা ইকামাতে দ্বীনের কাজ করেছে তারা অনেক জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। এদেশেও জামায়াত ইকামাতে দ্বীনের কাজ করার কারণে অনেক জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। ইকামাতে দ্বীনের কাজের মাধ্যমেই মুমিনদের সফলতা নিশ্চিত হতে পারে। জামায়াতের রুকনদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে এবং পিতামাতার খেদমত করতে হবে। পরিবারকে ইসলামী আন্দোলনের ঘাঁটি বানাতে হবে। সন্তানদের আধুনিক জাহিলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিয়ে বড় করতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণের আব্দুস সবুর ফকির, ড. হেলাল উদ্দিন, দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নানসহ ঢাকা দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমিররা।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দুর্বল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের জন্য দোয়া করতে ও সাহায্য পাঠাতে হবে। কোনো ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করে সংগঠনের কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জামায়াত সবসময় অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। এখন সময় এসেছে, জান-মালের কুরবানির বিনিময়ে হলেও এই সরকারের সব অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সরকারকে বিদায় করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তিকে কাজ করতে হবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয়ী হতে হবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমরা যদি সত্যবাদী ও মুত্তাকী হই এবং ইনসাফ ও আদল কায়েম করতে পারি তবেই আল্লাহ আমাদের খেলাফতের দায়িত্ব দিবেন। সরকারের জুলুম নির্যাতন সহ্য করে ইকামাতে দ্বিনের কাজ করে যেতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর গণভিত্তি তৈরি করতে হবে। নিজস্ব ভোটব্যাংক তৈরি করতে হবে। আমাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে দেওয়া হয়েছে, আমিরে জামায়াতসহ অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি রয়েছেন, এ টি এম আজহারুল ইসলাম ভাই দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। আমরা সব নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি। এ জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের মাধ্যমে আমরা সব হত্যার রক্তের বদলা নিব।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমাদের দাওয়াত হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনকে এক রব এবং রাসুলকে (সা.) আমাদের নেতা মানার দাওয়াত। কুরআন ও সুন্নাহ আলোকে বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহান স্বপ্ন নিয়ে জামায়াত কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এই কাজে একদিন সফল হবো। এইজন্য সমাজ থেকে অসৎ নেতৃত্ব বিদায় করে সৎ, যোগ্য, মেধাবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে হলে গণমুখী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সহ সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণকে ইসলামী আন্দোলনের রাজধানীতে পরিণত করতে হবে। জালিম সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে রুকনদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মন্তব্য করুন