সরকার পতনে নির্বাচন বর্জনকারী দলসমূহকে নিয়ে নতুনভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। আমরা রাজপথে আছি, বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ থেকে ফিরব না।
‘একতরফা’ প্রহসনের ভোটের প্রতিবাদে সোমবার (৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা জানান নুর। পরে মিছিল করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে নুরুল হক নুর বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের গণদাবি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে একদলীয় শাসন কায়েমে এই একতরফা নির্বাচন করেছে। নিজেরা নিজেরা নির্বাচন করেছে সেখানেও কেন্দ্র দখল, জোরজবরদস্তি করে ব্যালটে সিল মারা, শিশুদের দিয়ে ভোটদান, গোলাগুলি, মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। দেশের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ ভোট বর্জন করে এই নির্বাচনী তামাশা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিকেল ৩টার সময় একবার বললেন ২৮ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। এক ঘণ্টা পর আবার বললেন ৪০ শতাংশ। প্রকৃত অর্থে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে কিনা- সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, লোকজন ভোট না দিলেও এরা ৪০-৬০ শতাংশ ভোট মিলিয়ে দেখাবে। কাজেই ভোট কত পারসেন্ট পড়েছে, কারা ভোট দিয়েছে, কারা প্রার্থী হয়েছে- সেগুলো নিয়ে আলোচনা করার অবকাশ নেই। এই নির্বাচনই অবৈধ। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে জনমতের বাইরে এই ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা-মন্ত্রীদের কথা শুনে লজ্জা লাগে। ওবায়দুল কাদের বললেন- ভোটের মাধ্যমে নাকি তাদের বিজয় হয়েছে। তর্কের খাতিরেও আপনাদের কথা যদি ধরে নেই যে, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে- তাহলেও তো সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬০ শতাংশ মানুষ আপনাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তাহলে কীভাবে বলেন- জনগণ আপনাদের ভোট দিয়েছে।
ভিপি নুর বলেন, ফেলানি হত্যাসহ সীমান্ত হত্যার কথা মানুষের মন থেকে ভুলিয়ে দিতেই ৭ জানুয়ারি ফেলানি হত্যা দিবসে এই প্রহসনের ভোটের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। ৬৩টি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। ২০১৪ ও ’১৮ সালে ভোটের পর সেভাবে আন্দোলন হয়নি। বিএনপিসহ সকলকে বলব, এবার আর ভুল করা যাবে না। ৮০ থেকে ৯০ ভাগ জনগণ আমাদের সাথে আছে। ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানেই এই সরকারের পতন হবে।
দলের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, এখন বিরোধী দল খোঁজা হচ্ছে। কে হবে বিরোধী দল- জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা? এমনও হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিয়ে আওয়ামী লীগ দলের ঘোষণা করিয়ে বিরোধী দল বানাতে পারে। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়া মডেলে নির্বাচন হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রাশেদ খান বলেন, এই নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এই রাষ্ট্রে পচন ধরেছে, সুস্থতার জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। সব প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। জনগণকে বলব, আপনারা রাজপথে নামুন। শান্তিপূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই সরকারের পতন হবে, ইনশাআল্লাহ।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসানের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন-গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, জসিম উদ্দিন আকাশ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ, সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন