কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৪১ পিএম
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনদের মানববন্ধন

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনরা। ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনরা। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনরা বলেছেন, সারা দেশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও গুম খুন করছে। অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে দিনের পর দিন বিনা বিচারে আটক রাখছে। অনেকেই ইতোমধ্যে কারাগারে প্রাণ হারিয়েছেন। কখনো বিএনপি নেতাদের না পেলে তাদের স্বজনদের অন্যায় ও অমানবিকভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেকের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকালে বিএনপির গুম-খুন ও গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের স্বজনদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যরা এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ঢাকাসহ সারা দেশের কয়েকশত স্বজনরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, এভাবে গ্রেপ্তার-গুম-খুনের মাধ্যমে সরকার অনেকের পরিবার তছনছ করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। বিএনপি করা অপরাধ হয়ে থাকলে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলুন! এভাবে একজন করে কষ্ট দিয়ে মারবেন না। আমরা পুরো পরিবার এখন মরতে চাই।

‘রাজবন্দিদের স্বজন’র ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন শেষে প্রধান বিচারপতি বরাবর ‘ফরমায়েশি ও গায়েবি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও আটক রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে’ একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের স্বজনদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী শহিদ মির্জা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া, খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের সহধর্মিণী মাহবুবা খানম, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের স্ত্রী শায়লা জামান, ইদরিস আলীর স্ত্রী শিউলি বেগম, ইউনুস মৃধার মেয়ে আনিতা, যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাজিয়া, বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকাদর দুলুর মেয়ে ব্যারিস্টার তাবাসসুম, হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহানা ইসলাম, হাবিবুর রহমান হাবিবের স্ত্রী শাহানারা মায়া, ছাত্রদল নেতা আমানউল্লাহ আমানের ভাতিজি মার্জিয়া প্রমুখ।

মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। আরও অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক তাজমেরি এস এ ইসলাম, শিরিন সুলতানা, আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, আব্দুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমদ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ইউট্যাবের ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. আব্দুল করিম, ড. আবু জাফর, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এ্যাব-এর প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, এ কে এম আসাদুজ্জামান চুন্নু, মাহবুব আলম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ডা. পারভেজ রেজা কাকন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. শামসুল আলম, অধ্যাপক মো. কামরুল আহসান, অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, মো. নজরুল ইসলাম। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত আবদুল কাইয়ূম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর ও মুহাম্মদ রাশেদ খান প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আজকে এই সরকারে আমলে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। আজকে বাবাকে না পেয়ে ছোট শিশুরা কান্না করছে। স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রীরা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের অবস্থা আজকে করুন। তবে আমরা সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আমরা ক্ষমতায় গেলে আমরাও দেখব।

ঢাকা মহানগর যুবদলের নেতা লিয়ন হক ও রাজিব হাসানের বোন আফরোজা পারভীন জেবা বলেন, আমার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এক ভাইকে পুলিশ ১ মাস পরে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আমার পরিবার সদস্যদের গ্রেপ্তার-গুম-খুন করে সরকার তছনছ করে দিয়েছে।

বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা বেগম বলেন, রাত দুইটায় দরজা ভেঙে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমার বয়স্ক বৃদ্ধ স্বামী পুলিশকে কত আকুতি মিনতি করলাম যে বয়স্ক অসুস্থ নির্দোষ লোকটা না নিয়ে যেতে- কিন্তু পুলিশ বাসায় ভাঙচুর করে নির্দয়ভাবে তাকে তুলে নিয়ে যায়।

শিরিন সুলতানা বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ তাকে কারাগারে ডিভিশন দেয়নি। তবে বলব এই সরকারের পরিণতি ভালো হবে না।

জেলখানায় নিহত বিএনপি নেতার আবুল বাশারের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে মেরে আমার সন্তানকে এতিম করেছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।

ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, আমার ৩ ছেলেটা ও এক ছেলের বউকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করছে জেলে, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের দেখতে গেলেও আত্মীয়স্বজনকে আটকে থানায় হয়রানি করছে পুলিশ। আমি দেশে-বিদেশের বিবেকবান মানুষকে বলতে চাই; আমরা কীভাবে দিন কাটাচ্ছি, একটু চিন্তা করুন।

বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে ব্যারিস্টার তাবাসসুম বলেন, আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত! অথচ তাকে মুক্তি না দিয়ে জেলে ভরে রেখেছেন- আমার বাবার মুক্তি চাই।

সংহতি জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যেরকম মানবিক বিপর্যয় চলছে সেরকমই পরিস্থিতি দেশে বিরাজমান। উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বাংলাদেশে বিরোধীদল করা কী অপরাধ? সরকার কী বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে? তাহলে কেনো এভাবে অন্যায় অমানবিকভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? আজকে বিচারব্যবস্থার ওপরও সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। অথচ মানুষের শেষ ভরসা বা আশ্রয়স্থল হলো বিচার বিভাগ। আওয়ামী লীগ কিন্তু শেষ সরকার নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মৃত্যু ঘটেছে। তারা প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশি ত্রাস বন্ধ করতে আদালত রুল জারির মাধ্যমে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

আফরোজা আব্বাস বলেন, বিএনপির নেতাদের মিথ্যা মামলায় বিনাচিকিৎসায় কারাগারে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি দাবিতে প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি স্মারকলিপি দিতে চাইলে পুলিশ বিএনপি নেতাদের স্বজনদের কদম ফোয়ারা মোড়ে আটকিয়ে দেয়। পরে চারজনের একটি প্রতিনিধি দল আদালতে স্মারকলিপি দিয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে বিচার বিভাগকে রক্ষা করা, স্বাধীন ও ন্যায় বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আপনি অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান দমনপীড়ন, মিথ্যা, গায়েবি, হয়রানিমূলক মামলায় গণগ্রেপ্তার, রিমান্ডে পুলিশি নির্যাতন, ঢালাও সাজা প্রদান, জামিন প্রদান না করার বিষয়ে আপনার উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমাদের অনুরোধ, গণগ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধী মতাবলম্বী রাজনৈতিক বন্দিদের আশু মুক্তির জন্য আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও আদালতসমূহের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বিগ ব্রাদারসুলভ আচরণ করছে ভারত : রিজভী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র / আন্দোলনে শিক্ষার্থী নাদিম হত্যা মামলায় তাঁতী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের স্ট্যাটাস

সব রেকর্ড ভাঙল সোনার দাম

সুখবর পেলেন কঙ্গনা, সিনেমা মুক্তিতে নেই কোনো বাধা

মাদারীপুরে ‘কোপা শামসু’ গ্রেপ্তার

রাতের অন্ধকারে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, ৬ বাংলাদেশি আটক

এবার গাজার যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেবেন যিনি

ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ ২ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা

নির্বাচন কবে হতে পারে, জানালেন আসিফ নজরুল

১০

মুক্তি পেল দুই সিনেমা

১১

মধ্যরাতে ৩০০ ফিট সড়কে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান

১২

নোয়াখালীতে দখলমুক্ত ফুটপাত, ব্যবসায়ীদের জরিমানা

১৩

একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী সুজেয় শ্যাম আর নেই

১৪

ছিলেন জন্মগত বয়রা, গ্রেনেড হামলার ভুক্তভোগী সেজে ‘আওয়ামী গডফাদার’

১৫

গাজার যোদ্ধাদের প্রধান নিহত, যা বলছে পশ্চিমা বিশ্ব

১৬

ত্রাণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ যুবদলকর্মীর বিরুদ্ধে

১৭

মন খারাপ হলেই বিল্লাল দখলে নিতেন অন্যের সম্পদ

১৮

কে এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার

১৯

খাতা না দেখেই মনগড়া রেজাল্ট দিয়েছে, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

২০
X