৪৮ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে আজ সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান এই হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার দল বলছে, সব জায়গায় ড্যামি ক্যান্ডিডেট দিতে হবে। ড্যামি ক্যান্ডিডেট দেবেন কেন? আবার বলেছে, না স্বতন্ত্রও দাঁড়াবার সুযোগ আছে। সবাই বলছে, ব্যাপারটা কী? আমাদের দল থেকে টিকেট দেবে আবার দলই স্বতন্ত্র ক্যান্ডিডেট দেবে… তাহলে ভোটটা কী হবে? এটা কি কোনো ভোট হবে? তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, এটা আমাদের একটা কৌশল।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি আবারও বলি, এদের সব কিছুই কৌশল, অপকৌশল মানে ফোরটোয়েন্টি। ভোট হবে? হবে না। মানুষ ভোট দিতে যাবে জিজ্ঞাসা করেন… সবাই বলবে না। ক্যাম্পিং করতে পারবেন… কোনো কোনো পার্টি এখনই বলছে যে, কী মুশকিলে পড়ে গেলাম এই জোটে বা এই নির্বাচনে অংশ নেবার পরে এখন তো বাড়ি যাওয়ার পথই বন্ধ হয়ে গেছে… মানুষের ঘৃণা এতো তীব্র। দালালি করে যারা নিজেদেরকে বড় বানাতে চায়, নির্বাচনে নেতা বানাতে চায় তারা কিছু করতে পারবে না।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মান্না বলেন, ‘আমি একটা বিষয়ে হুশিয়ার করতে চাই, ওই অফিসে বসে বসে ফরম ফিলাপ করেন আমরা তো সেখানে গিয়ে প্রার্থীর ঘাড়ে ধরব না… সেটা আমাদের রাজনীতি নয়। আপনারা গোপনে গোপেন অনলাইনে আপনাদের মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন সেটা ঠেকানোর পথ নাই। নির্বাচন কমিশন বলবে, এতোগুলো প্রার্থী আছে… তারপরে কোনো ক্যাম্পেইন নাই তথাকথিত ভোটের দিনে রেজাল্ট ডিকলার্ড করে দেবেন এই তো।’
তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব বলেছে, একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, বাংলাদেশের বাচ্চা বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বলছে, ভোটের কোনো নজির নাই, বাংলাদেশের কোনো গ্রাম-গ্রামাঞ্চলে ভোটের কোনোরকম নজির আমরা দেখতে পারছি না। শেষবারের মতো অনুরোধ করব, এতেও আবার বিবেক বাধে… তবু আবার বলি, বাঁচতে যদি চান বন্ধ করে দেন। না হলে জনগণ এটা (নির্বাচন) বন্ধ করে দেবে। সারা দেশের মানুষ রাজপথে যেরকম করে নেমেছে, আন্দোলন যেরকম করে চলছে আপনাদের কোনো কৌশল টিকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ এই লড়াই করছে, আমরা ন্যায্য সংগ্রাম করছি। আমরা কোনো হঠকারিতা বুঝি না, আমরা সন্ত্রাসেও বিশ্বাস করি না। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের অভ্যুত্থান করবার জন্য যতরকম ঝুঁকি আসুক না কেন সেই লড়াই করছি, সেই লড়াই করতে থাকব। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের সাথে থাকবে।’
সরকারের পদত্যাগ ও ‘একতরফা’ তপশিল বাতিলের দাবিতে দুপুরে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিজয়নগর-তোপখানা রোডে মিছিল করেন। এরপর তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারের এই নির্বাচনটা হচ্ছে একতরফার নির্বাচন, নীল-নকশার নির্বাচন, সাজানো নির্বাচন। যে নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক দেখানোর সেটা পর্যন্ত এখন তারা যাচ্ছে না। এই পর্যন্ত সরকার দেউলিয়া নৌকার ভেতরে পানি ঢুকা শুরু করেছে। কারণ নৌকা যখন ডুবতে থাকে কোনো সচেতন মানুষ কী সেই নৌকায় উঠতে চাইবে? কেউ সেই নৌকায় উঠবে না।’
‘অনেক খেলা দেখিয়েছেন। এই সমস্ত খেলার তো শেষ আছে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ভোটের অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে… আরেকটা নির্বাচন…এটা তো নির্বাচন না, নির্বাচনের নামে উনারা আসন বরাদ্ধ দেবেন, উনারা তালুকদারি বরাদ্ধ দেবেন, নির্বাচনের নামে উনারা একেকটা জমিদারি, একেকটা আসন নতুন করে ৫ বছরের জন্য বরাদ্ধ দেবেন…. মানুষের অধিকার নিয়ে এই মশকরা করার সুযোগ কখনোই জনগণ হতে দেবে না। গণতন্ত্র মঞ্চ সেই লড়াইয়ে আমরা রাজপথে আাছি। আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার চলমান যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে সেগুলোতে আপনারা থাকবেন। যে গণআন্দোলন গণজাগরণের পরিণত হয়েছে যেকোনো এই গণআন্দোলন গণবিস্ফোরণ রুপ নেবে এবং এই সরকারকে বিদায় দিতে মানুষ বাধ্য করবে।’
বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা জোটের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় যা মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হবে।
সাইফুল হকের সভাপতিত্বে ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাসানী অধিকার পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন্, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভুঁইয়া, প্রতীম দাশ প্রমুখ নেতারা ছিলেন।
এ ছাড়া গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি প্রমুখ বিজয় নগর-তোপখানা রোড়ে মিছিল করে।
মন্তব্য করুন