কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩১ এএম
অনলাইন সংস্করণ
১৪১ জন সাবেক আমলার বিবৃতি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের আহ্বান

পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪১ জন বুধবার এক বিবৃতিতে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল বাতিল ও বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করার জন্য তারা ঘোষিত তফসিল বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তারা অবিলম্বে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে একটি সুস্থ ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তারা বলেন, দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের দাবি উপেক্ষা করে সরকারি দল তথা আওয়ামী লীগের পরামর্শ ও নির্দেশনা মোতাবেক আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে দেশ ও জাতিকে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের একতরফা নির্বাচন আয়োজনে সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে তারা মনে করেন।

সাবেক এই কর্মকর্তাগণ বলেন, সরকার জনআকাংক্ষা, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, এমিকাস কিউরিদের বিশেষজ্ঞ মতামত, এমনকি নিজ দলের সংসদীয় কমিটির মূল সুপারিশ উপেক্ষা করে ১৯৯৬ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে মীমাংসিত ও নন্দিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ২০১১ সনে বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি করে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪ ও ২০১৮ সনে অনুষ্ঠিত ২ টি নির্বাচনে জনগণ আর ভোট দিতে পারেনি। বিশেষ করে ২০০৮ এর পর নতুনভাবে ভোটার হওয়া কোটি কোটি যুবক ভোটার এ পর্যন্ত একবারের জন্যও ভোট দিতে পারেনি। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে নজিরবিহীনভাবে ১৫৩ জন সংসদ সদস্যকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করিয়ে নেওয়া হয়। আলোচনার মাধ্যমে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও ২০১৮ সনের নির্বাচনটি প্রহসনে পরিণত হয়। নির্বাচনের আগের দিন মধ্যরাতে ভোট হয়ে যাওয়ার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে।

তারা বলেন- দেখা যায় বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরাই বিজয়ী হয়েছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকার পরিবর্তিত হয়েছে। সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়েই আদালতের রায়ের অজুহাত দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বর্তমান সংকটের সৃষ্টি করেছে।

দেশের বর্তমান সংবিধান এবং রুলস অব বিজনেস অনুসারে প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যিনি একাধারে দলীয় প্রধান, সরকারের নির্বাহী প্রধান এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান। সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন সরাসরি তাঁর নিয়ন্ত্রণে। এমনকি নির্বাচন কমিশনসহ কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগেও তাঁর পছন্দের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় সরকারের ইচ্ছামত ঢেলে সাজানো হয়েছে। এমন বাস্তবতায় দেশের জনগণ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রত্যাশিত অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে সম্ভব নয়।

সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তারা বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ্য করছি সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ এর ন্যায় আরও একটি একতরফা প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একের পর এক বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। ২৮ অক্টোবর পরবর্তী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য গায়েবী মামলা দায়ের এবং নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মৃত, গুম, বিদেশে অবস্থানরত, ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ ব্যক্তিদেরও নতুন মিথ্যা মামলায় আসামী করা হচ্ছে। এমনকি মৃত ও গুমের শিকার অনেক নেতাকর্মীদের সাজানো মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। আইন বহির্ভূতভাবে পিতার পরিবর্তে পুত্রকে, পুত্রের পরিবর্তে পিতাকে, ভাইয়ের বদলে অন্য ভাই বা আত্মীয়-স্বজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে রাতের অন্ধকারে মুখোশধারী এবং হেলমেট বাহিনী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে বিরোধী দলের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করে চলেছে সরকার।

তারা বলেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছে সরকার। এহেন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন সরকারের একতরফা নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

সাবেক আমলারা বলেন, এদেশের ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে সংবিধানের বাইরে গিয়েও বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। কারণ নিকট অতীতে অর্থাৎ ১৯৯১ সাল এবং ২০০৮ সালে সংবিধানের বাইরে যেয়ে এ কাজটি করার নজির রয়েছে। ১৯৯১ সালে ঘটনাত্তোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সে সময় ‘ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি’ প্রয়োগ করে সংবিধানের বাইরে গিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর তাঁকে পুনরায় প্রধান বিচারপতি পদে ফেরৎ যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় যা পরবর্তী সংসদে ঘটনাত্তোর অনুমোদন এর মাধ্যমে সংবিধানসম্মত করা হয়। ২০০৭-০৮ সালের সেনা সমর্থিত জরুরী সরকার ৯০ দিনের স্থলে সংবিধানের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত প্রায় ২ বছরকাল ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন পরিচালনা করেন। উক্ত অতিরিক্ত মেয়াদকালকে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬ বাতিল করে প্রদত্ত রায়ে/আদেশে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক মার্জনা করা হয়। রায়ে বলা হয়, ২০০৭ সালের দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৯০ দিন মেয়াদ পরবর্তী অতিরিক্ত প্রায় দুই বছরের সময়কাল প্রশ্নবিদ্ধ বিধায় ওই অতিরিক্ত সময়কালের কার্যাবলী মার্জনা করা হইলো। মোদ্দা কথা রাজনৈতিক সমঝোতা হলে প্রয়োজনে ‘ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি’ প্রয়োগ করে যেকোনো প্রতিবন্ধকতাই সফলভাবে কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল মামলার রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করলেও আদালত বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনায় উল্লেখ করে বিচারপতিদের সম্পৃক্ত না করে পরবর্তী ২ টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় অনুষ্ঠানের পক্ষে রায় প্রদান করেন, যা সরকার সচেতনভাবে অমান্য করে।

তারা বলেন, আরও একটি বিতর্কিত ও একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘণীভূত হবে। দেশের ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগকে উপেক্ষা করে আরও একটি একতরফা প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হলে এর সকল দায়-দায়িত্ব মূলত সরকারকে বহন করতে হবে বলে আমরা মনে করি।

সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ ও যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল বারী স্বাক্ষরিত বিবৃতিদাতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা হলেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এএসএম আব্দুল হালিম, সাবেক আইজিপি মো. আবদুল কাউয়ুম, সাবেক সচিব সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, মোঃ আব্দুর রশীদ সরকার, আবু মোঃ মনিরুজ্জামান খান, এএমএম নাছির উদ্দিন, মোঃ মনিরুল ইসলাম, মোঃ শরফুল আলম। এছাড়া এম সিরাজ উদ্দিন, ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, মকসুমুল হাকিম চৌধুরী, মোঃ আবদুজ জাহের, আফতাব হাসান, মোঃ আজিজুল ইসলাম, সাবেক এটর্নি জেনারেল ইকতেদার আহমেদ, মোঃ মনসুর আলম, এ কে এম মাহফুজুল হক, শেখ মোঃ সাজ্জাদ আলী, মোঃ মেজবাহুন্নবী, বাহারুল আলম, মোহাম্মদ মাজেদুল হক, মোঃ খান সাঈদ হাসান, মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, মোহাঃ আবুল কালাম আজাদ, এম আকবর আলী, ডাঃ এ জেড এম জাহীদ হোসেন, বিজন কান্তি সরকার, এ বি এম আব্দুস সাত্তার, তপন চন্দ্র মজুমদার, এ কে এম জাহাঙ্গীর, আখতার আহমেদ, এস এম শমসের জাকারিয়া, মুন্সি আলাউদ্দিন আল আজাদ, ড. মোঃ আব্দুস সবুর, মোঃ আতাউল হক মোল্লা, এ এইচ এম মোস্তাইন বিল্লাহ, মোঃ আব্দুল খালেক, এম এম সুলতান মাহমুদ, মোঃ ফিরোজ খান নুন, মোঃ ওয়াছিম জাব্বার, মোঃ এমদাদুল হক, খদকার মোঃ মোখলেছুর রহমান, মোঃ ফেরদৌস আলম, মোঃ ফজলুল করিম, মোঃ আবু তালেব মোঃ আমিনুল ইসলাম, ড. মোঃ ফেরদৌস হোসেন, মোঃ গিয়াস উদ্দিন মোগল, মোঃ আফজল হোসেন, মোঃ শেফাউল করিম, জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী, শহীনুল ইসলাম, সৈয়দ লোকমান আহমেদ, এস এম মনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, মোঃ মহিবুল হক, মোঃ ফজলুল হক, মোঃ আজহারুল ইসলাম, বশীর উদ্দীন আহমেদ, মোঃ নবীউল হক মোল্যা, ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, মোঃ কামরুজ্জামান চৌধুরী, কাজী মেরাজ হোসেন, মোহাম্মদ মসিউর রহমান, আব্দুর রহিম মোল্লা, মোঃ শফিক আনোয়ার, মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ আফতাব আলী, মোঃ তৌহিদুর রহমান, মোঃ আব্দুল্লাহ্ আল-বাকী, মোঃ জামাল হোসেন মজুমদার প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় আটক ৬

ডিবি কার্যালয়ে আয়নাঘর থাকবে না

টাইগারদের বিপক্ষে কেমন হবে ভারতের একাদশ?

শরীয়তপুরে ১০২ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পূজা হচ্ছে

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

ইয়েমেনের ১৫ নিশানায় মার্কিন হামলা

‘বিরল’ এক সফরে পাকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজীপুরে বাসচাপায় যুবক নিহত

দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকবে বিএনপি : আজাদ

১০

সাড়ে ৩ কোটি টাকার চাল নিয়ে লাপাত্তা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা

১১

সাতক্ষীরায় ৯ মাস বেতন পাচ্ছেন না ৪২০ শিক্ষক

১২

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

১৩

গাজীপুরে শান্তিপূর্ণভাবে চলছে পোশাক কারখানার উৎপাদন

১৪

বৃষ্টি আর কত দিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৫

ইসরায়েলি হামলায় সিরিয়া-লেবানন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

১৬

দুপুরের মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১৭

আরেক দেশ থেকে ইসরায়েলে হামলায় ২ সেনা নিহত, আহত ২৪

১৮

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জবির স্লোগান ‘বিপ্লবে বলীয়ান নির্ভীক জবিয়ান’

১৯

শিক্ষক দিবসে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে

২০
X