মহাসমাবেশ ও হরতালের পর এবার তিন দিনের (৭২ ঘণ্টা) কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচি অনুযায়ী, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
রোববার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। অনেকেই গুম খুন হয়েছেন। আমাদের নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া মুমুর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। বিদেশে তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। তাকে সুচিকিৎসা বঞ্চিত করা হয়েছে। তার মুক্তির জন্য, দেশের সীমাহীন বঞ্চনা, অব্যাহত দুর্নীতি লুটপাট, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার, নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশির নামে ভাঙচুরের প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। রেলপথ, নৌপথ, রাজপথ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ও সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের যৌথ সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়ে মহাসমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করে।
ওইদিন রাতে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রেরিত এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত তাণ্ডব ও সশস্ত্র হামলা নজিরবিহীন এবং ন্যক্কারজনক। বিএনপির মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাদের এবং পুলিশের বক্তব্যেরই প্রতিফলন বিএনপির কর্মসূচিতে সশস্ত্র এবং রক্তাক্ত আক্রমণ। বেশ কয়েকদিন ধরে পুলিশের গণগ্রেপ্তার, হামলা, হুমকি-ধমকি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের লাঠি হাতে বিএনপির মহাসমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণারই বাস্তবায়ন হয়েছে আজ।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশে যোগদানে বিরত রাখতে গ্রেপ্তার ও মামলার হিড়িক চালায় সরকার। কিন্তু সেখানে ব্যর্থ হয়ে আজ যখন দেখল সকালেই মহাসমাবেশে মানুষের ঢল নেমেছে, মহাসমাবেশ কাকরাইল ছাড়িয়ে পশ্চিম পার্শ্বে কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে, তখন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠি-অস্ত্র নিয়ে বিএনপির লোকদের ওপর হামলা করে। তারা গুলি করতে করতে, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছুড়তে ছুড়তে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত চলে আসে। পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলির ঘটনায় মঞ্চে থাকা সিনিয়র নেতারাও মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ও আহত হন। এ সময় অসংখ্য নেতাকর্মীও আহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে মুগদা থানা যুবদল নেতা শামীম নিহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য গণমাধ্যমের কর্মীও। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শনিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে পুলিশ বিএনপির দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ পারাপার বন্ধ করে দিয়ে যখন সরকার আমাদের মহাসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি, তারা যখন দেখছে বাধা উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে লাখ লাখ লোক যোগ দিয়েছে, তখন তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা করে আমাদের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার সম্পূর্ণ মাস্টারপ্ল্যান করে বিএনপির সমাবেশে হামলা করিয়েছে। আমি বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাাচ্ছি। আটকদের মুক্তি দাবি করছি, আহতদের সুস্থতা কামনা করছি এবং আগামীকাল রোববারের হরতাল সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে রোববার বিএনপির চলমান সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফলে রাজধানীতে মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। দুপুরে নর্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিলটি শুরু হয়। এরপর কোকোকোলা হয়ে নতুনবাজার আমেরিকান দূতাবাসের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এ সময় রিজভী বলেন, অন্যায়ভাবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পণ্ড, পুলিশ হত্যা সরকারের নীল নকশার অংশ।
যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, চলমান আন্দোলনে এই সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে যুবদল নেতা শামীম মোল্লাসহ সব নেতাকর্মীর গুম-খুনের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে।
নেতাকর্মীরা সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহঅর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সহসভাপতি রুহুল আমিন আকিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল, বাড্ডা থানা যুবদল নেতা মো. বাবুল হোসেন মীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন