আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে শনিবার রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে (আওয়ামী লীগ-বিএনপি-পুলিশ) বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়েছেন। এতে দৈনিক কালবেলার অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক রাফসান জানি, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জনি রায়হান, আবু সালেহ মুসা, রবিউল ইসলাম রুবেল ও তৌহিদুল ইসলাম তারেক আহত হয়েছেন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কালবেলার পাঁচজনসহ এদিন সংঘর্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কালবেলার অপরাধবিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক আতাউর রহমান বলেন, নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের দুজন ও একজন আনসার সদস্যকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মারধর করতে থাকে। রাফসান কোনো ছবি বা ভিডিও না করলেও কালবেলার আইডি কার্ড দেখে পুলিশকে মারধর করা ছেড়ে কয়েকজন এসে তাকে মারতে থাকে। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত লাঠি, গাছের ডাল, পাইপ দিয়ে পিটিয়েছে তারা। এ সময় তার আইডি কার্ড, মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে গেছে। পরে গণমাধ্যমের সহকর্মীরা এসে রাফসানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা গুরুতর।
জানা গেছে, হামলার শিকার হওয়ার পর রাফসান জানিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, রাফসানের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে কালবেলা কর্তৃপক্ষ। তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা। অন্যদিকে, রাফসানের সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন কালবেলার প্রধান সম্পাদক আবেদ খান।
জানা গেছে, দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালবেলার মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার তৌহিদুল ইসলাম তারেকের মুখে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে। একই জায়গায় রবিউল ইসলাম রুবেল ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন। তার হাত ফুলে গেছে। অন্যদিকে, আবু সালেহ মুসাকে মারধর করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গুলিস্তানে দলটির শান্তি সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তাকে মাটিতে ফেলে পেটাতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর জনি রায়হান বিকেলে কাকরাইল এলাকায় সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়েছেন। তিনি বাম কানে শুনতে পারছেন না।
এ বিষয়ে তৌহিদুল ইসলাম তারেক বলেন, এসব হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা সাংবাদিকদের টার্গেট করেই হামলা করেছে। আমার মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়েছে।
শনিবার সংঘর্ষের ঘটনায় আরও আহত হয়েছেন নিউএজের বিশেষ প্রতিনিধি আহমেদ ফয়েজ, বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক সালমান তারেক শাকিল, নিজস্ব প্রতিবেদক জোবায়ের আহমেদ ও ফটো সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন, দেশ রূপান্তর পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরিফুর রহমান রাব্বি, সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদক মুহাম্মদ আলী মাজেদ, শেয়ার বিজের প্রতিবেদক হামিদুর রহমান, ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদক সিরাজুম সালেকীন, ব্রেকিং নিউজের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক কাজী ইহসান বিন দিদার ও আহসান হাবিব সবুজ, একুশে টিভির প্রতিবেদক তৌহিদুর রহমান ও ক্যামেরা পারসন আরিফুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাকের মাল্টিমিডিয়ার রিপোর্টার তানভীর আহাম্মেদ ও শেখ নাসির, দৈনিক ইনকিলাবের ফটোসাংবাদিক এফ এ মাসুম, গ্রীন টিভির বিশেষ প্রতিনিধি রুদ্র সাইফুল্লাহ ও ক্যামেরাম্যান আরজু, ভোরের কাগজের ফটো সাংবাদিক মাসুদ পারভেজ আনিস, নুরুজ্জামান শাহাদাৎ ও ক্যামেরাপার্সন আরিফুল ইসলাম পনি, কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক শেখ হাসান ও ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান, দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের ভিডিও জার্নালিস্ট তাহির জামান প্রিয়, বাংলানিউজের জাফর আহমেদ এবং ফ্রিল্যান্সার মারুফ।
এদিকে, পেশাগত কাজে দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) সহসাংবাদিক সংগঠনগুলো। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
অন্যদিকে, আহত সাংবাদিকদের দেখতে শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, যে বা যারাই সাংবাদিকদের মারধর করেছে সেটা দুঃখজনক। আহত সাংবাদিকদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে, আহতদের দেখতে যাওয়া হবে।
মন্তব্য করুন