বিএনপি-জামায়াত এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ২৮ তারিখের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যম। রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজধানীর চিত্র ফুটে উঠেছে বিশ্বের নানা গণমাধ্যমে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি জানায়, বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বিরোধীদলের সমর্থকদের নিবৃত্ত করতে তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এ সময় পুলিশের ওপরও পাথর ছোড়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদচ্যুতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এপি আরও জানায়, পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে অন্তত একজন পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
ঢাকায় পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন আসোসিয়েট প্রেসকে জানান, শনিবার দুপুরের পরে ঢাকার অন্তত ১০টি স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। এ সময় বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। বিরোধীদলের মুখপাত্র জহির উদ্দিন স্বপন জানান, ১০ লাখ কর্মী সমাবেশে যোগদান করেছে। তবে ফারুক হোসেন বলেছেন সংখ্যাটি ২ লাখ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। আল জাজিরা জানায়, রয়টার্সকে বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে যেভাবে পুলিশ দিয়ে আমাদের দমন প্রেরণ করা হলো তা অন্যায্য।
আল জাজিরার রিপোর্টার তানভীর চৌধুরী জানান, রাস্তায় সহিংসতার কারণে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রোববার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এদিকে সোমবারও গণ জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তানভীর আরও বলেন, খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনকারীরা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের কার্যকর অভিযোগ ও তোলেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে রাজধানী জুড়ে সহিংসতার সংবাদ প্রকাশ করেছে।
ভয়েস অব আমেরিকা প্রতিবেদনের শিরোনামে লিখেছে, ‘বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ।’
মিছিলে ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার একজন সাংবাদিক। তিনি জানান, সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণে রাস্তা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। এসময় শত শত লোক নিরাপত্তার জন্য দৌড়াচ্ছিল। বিক্ষোভস্থলের চারপাশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং রাবার শটগান রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছিল, যখন বিক্ষোভকারীরা পাথর ও ইট ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়।
জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভ্যালে রাজনৈতিক দলগুলোর ২৮ তারিখের সমাবেশে সংঘাতের খবর প্রকাশ করেছে। তারা প্রতিবেদনের শিরোনামে লিখেছে, সংঘাতে রূপ নিল সরকারবিরোধী আন্দোলন।
ভারতের স্বনামধন্য গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশ, বিরোধীদলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বিএনপির সমাবেশের দিনই জামায়েত ইসলামী পৃথক আরেকটি সমাবেশ আয়োজন করে। এ সময় তারা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভঙ্গ করে। পরে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
ফ্রান্স ২৪ জানায়, বিএনপি মুখপাত্র জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, এটি হাসিনার পদত্যাগের ‘ফাইনাল কল’। গত সপ্তাহে ২৯০০ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। যদি শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করেন তাহলে সারা দেশে সহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।
গণমাধ্যমটি আরও জানায়, পশ্চিমা সরকারগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধীদলের আন্দোলন কর্মীদের আটকে রাখা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম খুনের অভিযোগ তুলেছে।
ইয়াহু নিউজ ‘বাংলাদেশপ্রধানমন্ত্রী বিরোধী আন্দোলনের টিয়ার গ্যাস রাবারবুলেট নিক্ষেপ করল পুলিশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঢাকায় এক লাখ নেতাকর্মী আন্দোলন গড়ে তুলে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের বরাতে গণমাধ্যমটি জানায়, তাদের লাইভ ফুটেজে দেখা যায়, হাজারো মানুষ নিরাপত্তার জন্য দৌড়াচ্ছে এবং রাস্তা থেকে কালো ধোয়া উঠছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, বিরোধীদলের মহাসমাবেশ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বিরোধীদল তাদের এ মহাসমাবেশকে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের চূড়ান্ত ঘণ্টা হিসেবে বিবেচনা করছে। বিএনপি এবং দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামের এই মহাসমাবেশ চলতি বছরে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণজমায়েত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে এএফপি সাংবাদিকরা জানিয়েছে।
এ ছাড়া নিক্কেই এশিয়া একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম- বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাবেশে সংঘর্ষ, নির্বাচন নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতি।
মন্তব্য করুন