হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস জটিলতার কারণে ফুসফুসে পানি জমা ও রক্তক্ষরণ বন্ধে ‘টিপস’ করা সম্ভব কি না—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তারা ঢাকায় পৌঁছে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ওঠেন। এরপর রাত পৌনে ১১টায় মার্কিন ওই দুই চিকিৎসক খালেদা জিয়াকে দেখতে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। মার্কিন আরেকজন চিকিৎসকের বুধবার রাত ২টায় ঢাকায় আসার কথা।
তারা বৃহস্পতিবারও (২৬ অক্টোবর) বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ফের পর্যালোচনা করবেন। এরপরই চিকিৎসকরা এই ‘টিপসের’ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য কালবেলাকে জানান, ‘টিপস’ চিকিৎসার একটি পদ্ধতি। বুকে পানি ও রক্তক্ষরণ বন্ধে এটা প্রয়োগ করা হয়। খালেদা জিয়ার এই চিকিৎসা ইমিডিয়েট দরকার। কিন্তু এই টিপস বাংলাদেশে হয় না।
বুধবার সন্ধ্যায় আসা দুই চিকিৎসক হলেন- জনহোপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. হামিদ আহমেদ আব্দুর রাব ও ডা. জেমস পিটার অ্যাডাম হ্যামিলটন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রফেসর হামিদ রাব জনহোপকিন্সের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। আর সহযোগী অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলোজি বিভাগের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, ডা. ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস বুধবার দিবাগত রাত ২টায় ঢাকায় পৌঁছার কথা। তিনি ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের পরিচালক। তিনি রেডিওলোজি অ্যান্ড রেডিওলোজিকাল বিশেষজ্ঞ।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন এই তিন চিকিৎসক সম্পর্কে বলেন, এই তিনজনই হাইলি এক্সপার্ট বিভিন্ন বিভাগে অর্থাৎ নেফ্রোলজি, হেপাটোলজি এবং ইন্টারন্যাশনাল রেডিওলজি, লিভার-কিডনি ট্রান্সপারেন্ট বিভাগের। তারা ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) করে বা এ রকম (লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত) রোগী ম্যানেজ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের জনহোপকিনস ইউনির্ভাসিটির স্কুল অব মেডিসিনের। তিনজনই খুব দক্ষ ও বিখ্যাত চিকিৎসক।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। এরপর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করবেন মার্কিন চিকিৎসকরা।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
‘টিপস’ প্রসঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, মার্কিন চিকিৎসকরা খুবই অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয়। এখন দেশের কোনো হাসপাতালে ওই রকম উন্নত যন্ত্রপাতি আছে কি না, এসব দেখবেন। তারপর উন্নত চিকিৎসা দেবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাওয়ায় বাইরে থেকে চিকিৎসক আনতে হচ্ছে। গত সোমবার রাতেও এক দফায় সিসিইউতে নিতে হয়েছে। সেখানে পেট থেকে পানি অপসারণ করা হয়। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কিছুটা কমলে পরে তাকে আবার কেবিনে নেওয়া হয়। এর আগে চার দফায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালে টানা চিকিৎসা নিতে গিয়ে তার শারীরিক দুর্বলতা প্রবল আকার ধারণ করেছে।
গত ৯ অক্টোবর বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন করা জরুরি। তবে দেশে এর কোনো চিকিৎসা নেই। এখন বিদেশে বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত চিকিৎসা কেন্দ্রে তার চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। তবে সরকার আইনের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেননি। এ জন্য বিএনপি ও তার পরিবার বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আনলেন।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ছাড়াও আর্থ্রাইটিস, কিডনি এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তার হাটেও সমস্যা রয়েছে।
গত ৯ আগস্ট থেকে আড়াই মাস ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া।
মন্তব্য করুন