সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আগামী ৩০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাওয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে ওই কর্মসূচির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কর্মসূচির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ও তার মিত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ করতে চায়। তবে আগামী ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি কী হয় তার ওপরও কর্মসূচির ধরণ কী হবে তা নির্ভর করবে। স্বাভাবিকভাবে মহাসমাবেশ করতে পারলে সেখান থেকে ঘেরাওয়ের ওই কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। যদি তা না হয়, তাহলে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারি দল যদি মহাসমাবেশে বাধা দেয়, তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বৈঠকে একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঘেরাও, বিক্ষোভ, অবস্থান, অবরোধ এমনকি হরতালের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা জানান, আগামী ৩০ অক্টোবর যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে পদযাত্রা সহকারে সচিবালয় অভিমুখে রওনা হবে। বিএনপি তাদের নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করবে। তাদের পদযাত্রার সম্মুখভাগে থাকবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য, নারী ও শ্রমিক এবং সব শেষে বিএনপি।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম ও জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
এর আগে একই স্থানে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের ভার্চুয়ালি বৈঠক হয়। ওই বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্দেশে বলা হয়, বিএনপি কোনোভাবেই বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা, গণতন্ত্র মঞ্চও তাদের অধীনে ভোটে যাবে না। এ সময় মঞ্চের নেতারা বিএনপি’র হাইকমান্ডকে আশ্বস্ত করেন, তারাও বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটে যাবেন না।
এ সময় গণতন্ত্র মঞ্চকে বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, গণতন্ত্র মঞ্চ চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে জাতীয় সরকারে গণতন্ত্র মঞ্চকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।
বৈঠক প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করতে চাই। মহাসমাবেশে জনতার স্রোত নামাতে চাই। দাবি আদায়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই।
তারা আরও বলেন, সরকারের আচরণ ও পরিস্থিতিই বলে দেবে তাদের কর্মসূচির ধরন কী হবে। তবে তারা শেষ পর্যন্ত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চান।
মন্তব্য করুন