ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর। রাজনীতির মাঠে আলোচনা শুধুই দিনটিকে ঘিরে। প্রথমে বিএনপির মহাসমাবেশের ঘোষণা। তারপর মতিঝিলে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এদিন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। শুধু রাজধানী নয় টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে ২৮ অক্টোবর। সমাবেশ সফল করতে প্রশাসনের অনুমতি না চেয়ে সহযোগিতা চেয়েছে জামায়াত। একই সঙ্গে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছে সমাবেশে যোগ দিতে। সবাইকে ছাড়িয়ে এখন সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু জামায়াত।
২০১৩ সালের পর আলোচনার বাইরে থাকলেও চলতি বছরের ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে আবারও আলোচনায় আসে দলটি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে বেশ সরব জামায়াতে ইসলামী। এমনকি দলটির সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও বৃহৎ পরিসরে বিক্ষোভ মিছিল করছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহানগর ও উপশহরে।
চলতি বছরের ১০ জুন সবশেষ অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করে দলটি এরপরই যতবারই অনুমতি চাওয়া হয়েছে তার একটিরও অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। তবে জামায়াত তাদের কর্মসূচি বন্ধ করেনি। অনুমতি ছাড়াই ঢাকাসহ সারাদেশে মিছিল ও সমাবেশ করেছে দলটি। তবে ২৮ অক্টোবর নিয়ে ভিন্ন চিন্তা রয়েছে দলটির। জাময়াতের একটি সূত্র থেকে জানা যায় ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি। ইতোমধ্যে সংগঠন বিভাগ, মহানগর, নগর, থানা ও ইউনিটসহ সকল স্তরে মিটিং করছে দলটি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর প্রশাসন অনুমতি না দিলেও যে কোন মূল্যে সমাবেশ বাস্তবায়ন করবে দলটি। মতিঝিল জায়গা না পেলেও তার আশপাশে যে কোন জায়গায় নিজেদের শক্তি জানান দিবে জামায়াত।
২৮ অক্টোবর সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ জানায়, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের সভা-সমাবেশ ও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার যাতে তারা প্রয়োগ করতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা পুলিশের দায়িত্ব। তাতে বাধা দেওয়া পুলিশের দায়িত্ব হতে পারে না। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি বিগত সময় ৫০ থেকে ৬০ বারেরও অধিকবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই ভূমিকা থেকে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হয়ে এক দফা দাবি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে জানায়, সরকারের কোনো ধরনের উসকানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্রবিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য নির্বাহী পরিষদ দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
এদিকে নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব দলগুলো। এবার তারা নামতে যাচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এ সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে দলটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে—দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিএনপির চলমান আন্দোলনে সহায়ক হলেও নেতাকর্মীদের রাজপথে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে হবে। এখান থেকে দলটির পিছু হটা কিংবা ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। যদিও বিএনপির চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরু হলে ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে যেমন তাদের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার, মামলা, নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি অতিক্রম করেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তা সফল করা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবেন এবং মাঠে থেকে আন্দোলনকে সফল করবেন।
মন্তব্য করুন