কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কী ঘটতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর?

রাজধানীতে বিএনপির আন্দোলনের পুরোনো ছবি। সংগৃহীত
রাজধানীতে বিএনপির আন্দোলনের পুরোনো ছবি। সংগৃহীত

নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব দলগুলো। এবার তারা নামতে যাচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এ সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে দলটি।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে, বিএনপির এ মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে রাজপথে কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের নামে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের কড়া জবাব দিতে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক মাঠে বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সবার মনে প্রশ্ন জাগছে আসলেই কী ঘটতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর?

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে—দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আশা করছি সরকারের বোধদয় হবে, তারা পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করবে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে, দেশকে সংকটের হাত থেকে উদ্ধার করবে। এটা আমরাই শুধু চাই না, আন্তর্জাতিক বিশ্বও চায়—যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা সবাই চায়। যদি সরকারের বোধোদয় না হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

কী থাকছে বিএনপির মহাযাত্রায়

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আবর্তিত হবে মহাযাত্রার কর্মসূচি, যার মূল লক্ষ্য থাকবে তপশিল ঘোষণা ঠেকানো। সেজন্য ২৮ অক্টোবরের পর তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত টানা কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য বিএনপির। এর অংশ হিসেবে তপশিলের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই এ কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। এ সময় ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও আন্দোলন চলবে।আন্দোলনে পুরো দেশকে যুক্ত করবে বিএনপি। তবে রাজধানীর ওপর থাকবে আন্দোলনের মূল ফোকাস।

নভেম্বরের শুরুতে এমনকি মহাসমাবেশের পরের দিন থেকেও শুরু হতে পারে মহাযাত্রার ওই কর্মসূচি, যা ঘেরাও দিয়ে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে। বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের এ পর্যায়ে ঘেরাও ছাড়া বিক্ষোভ, অবরোধ এমনকি হরতালের কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে শেষ পর্যায়ে দেশজুড়ে চলতে পারে লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি। এর মধ্যে থাকতে পারে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ। নেতাকর্মীরা যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। দু-একদিনের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহাযাত্রার কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি।

মহাযাত্রা নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান অপরদিকে বিএনপির মহাযাত্রাকে রুখে দিতে মাঠে প্রস্তুত থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির পরিণতি ১০ ডিসেম্বরের মতোই হবে। ১০ ডিসেম্বর তাদের যেতে হয়েছিল গোলাপবাগের গরুহাটে, এখন কোথায় যাবে সেটাই দেখার বিষয়। একই দিনে বড় দুদলের অবস্থান নিয়ে সংসয় রয়েছে রাজধানীজুড়ে। এ জন্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা জোরদার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কারা থাকছে বিএনপির সঙ্গে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপির শরিকরাও প্রস্তুতি শুরু করেছে। জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘ঢাকার মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেবেন। এ কর্মসূচি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে চাই। সরকারের কাছে মহাসমাবেশের বার্তা হবে—অবিলম্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণে তারা একটা কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ নেবে। তারপরও সরকারের যদি বোধোদয় না হয়, পরের দিন থেকে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। স্বীকৃত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে ফর্মগুলো রয়েছে যেখানে অবস্থান, বিক্ষোভ, ঘেরাও, অবরোধ এমনকি হরতাল পর্যন্ত আছে—পর্যায়ক্রমে সেগুলো আমরা অ্যাপ্লাই করব। তবে আমরা কখন কোনটাতে যাব, সেটা নির্ভর করবে সরকার ও প্রশাসনের আচরণের ওপর। আমাদের লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত পুরো আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখা। আমরা সরকারের উসকানি, সহিংসতা এড়িয়ে কর্মসূচি করতে চাই, যেন লাখ লাখ মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।’

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীও সম্পৃক্ত হবে। গত ৩০ ডিসেম্বর আন্দোলন শুরুর পর প্রথম দুটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করলেও বিএনপির সঙ্গে টানাপড়েনে পরবর্তী সময়ে একক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে দলটি। এদিকে একদফার আন্দোলনে জামায়াত সম্পৃক্ত হলে দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও তখন পৃথক কর্মসূচি নিয়ে ছাত্রঐক্যের সঙ্গে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে দাবি ওই সূত্রের।

কী ভাবছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিএনপির চলমান আন্দোলনে সহায়ক হলেও নেতাকর্মীদের রাজপথে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে হবে। এখান থেকে দলটির পিছু হটা কিংবা ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। যদিও বিএনপির চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরু হলে ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে যেমন তাদের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার, মামলা, নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি অতিক্রম করেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তা সফল করা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবেন এবং মাঠে থেকে আন্দোলনকে সফল করবেন।

বিএনপির কর্মসূচি সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে একদফার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও শরিকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত বুধবার ঢাকায় জনসমাবেশ করে বিএনপি। এর মাঝে আরও সমাবেশ, পথযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে দলটি।

একদফা দাবিতে ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। যা ছিল ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ; ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেটে রোডমার্চ; ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ; একইদিন বাদ জুমা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় সারা দেশে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এ ছাড়া ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালীতে রোডমার্চ; ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও আমিন বাজারে সমাবেশ; ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে রোডমার্চ এবং ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন; ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জনসমাবেশ; ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশ; ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন; ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ; ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ; ৩ অক্টোবর কুমিল্লা, ফেনী, মীরসরাই ও চট্টগ্রামে রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর আবারও টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে দলটি। একদফা দাবিতে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ফের টানা কর্মসূচি দেন মির্জা ফখরুলরা। যার মধ্যে ছিল ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে সমাবেশ ও মিছিল, ১২ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন। ১৪ অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে অনশন, ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুবসমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জনসমাবেশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাঈদী ও আলেমদের ওপর নির্যাতনের কথা বলায় চাকরি গেল ইমামের

সনি র‌্যাংগসের ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আটকে যায় দুদকের তদন্ত

ইউএনওকে ফোন করে নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ করল স্কুলছাত্রী

১২৭ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস

প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক গেমিংয়ের অনুমতি পেল আবুধাবি

‘গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে আমেরিকা বিভিন্ন দেশে অশান্তি লাগিয়ে রেখেছে’

ছাত্রদলের কর্মসূচি ঘোষণা

ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ভণ্ডামি প্রমাণ করেছে

‘নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরলে কারাদণ্ড’

চবিতে সহপাঠীরা ক্লাসে ফিরলেও শহীদ হৃদয় ও ফরহাদের টেবিলটা রইল ফাঁকা

১০

বিপৎসীমার ওপরে উব্দাখালী নদীর পানি

১১

ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ, ৭৫ রানে নেই ৬ উইকেট

১২

বন্যার প্রবণতা কমাতে শায়খ আহমাদুল্লাহর পরামর্শ

১৩

আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকহ একাডেমি পরিদর্শন ধর্ম উপদেষ্টার

১৪

যশোরে ডিসি অফিস ঘেরাও, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

১৫

চামড়াশিল্পকে আমরা উৎসাহিত করব : বাণিজ্য উপদেষ্টা

১৬

অর্থ পাচার ইস্যুতে ব্রিটিশ হাইকমিশন প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুদকের বৈঠক

১৭

রংপুরে শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ

১৮

নারায়ণগঞ্জে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৯

পচা টিক্কা দেওয়ায় প্রতিবাদ, গ্রাহককে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল স্টার কাবাব

২০
X