টানা ৯ ঘণ্টার বৈঠক। গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের আয়োজনে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় রাত তিনটায়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন থেকে আবার ঐক্যবদ্ধভাবেই চলবে সংগঠনটি।
বৈঠকে ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসানসহ প্রায় সকল পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আগেই বিদেশে অবস্থানরত গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন ড. রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুর। গণঅধিকারের বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামানের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে বৈঠকে যোগদান করেন নুরুল হক নুর।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুসারে পূর্বে গঠিত তদন্ত কমিটির এখতিয়ার তুলে নেওয়া হয়। অর্থাৎ এ তদন্ত কমিটি কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না। একইসঙ্গে গত দুইদিন যে বহিষ্কার এবং পাল্টা বহিষ্কারের ধারা চলে আসছে তা থেকেও বের হয়ে আসবেন দুই পক্ষ। এবং যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা পূর্বের পদেই বহাল থাকবেন।
বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, বৈঠকে তোপের মুখে পড়েন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে তার কড়া সমালোচনা করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা।
বৈঠকের আগে কোটা আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের মূল সমস্যা ড. রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুরের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগ। যেখানে সংগঠনের অস্তিত্বের প্রশ্ন, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর শ্রম, ঘামের প্রশ্ন সেখানে অবশ্যই উভয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া দলের আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিতে পারেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। কিন্তু নৈতিক জায়গা থেকে আমি এটি সমর্থন করি না এবং সংগঠনের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তই হবে আমার সিদ্ধান্ত। ঠিক তেমনিভাবে রাশেদ খানকে চলতি দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করাকেও যৌক্তিক মনে করি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড. রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুরের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যকে আমি সমর্থন করি না। শ্রম, ঘাম, রক্তের বিনিময়ে এই সংগঠন এজন্য তৈরি করিনি যে, যে কেউ চাইলে এই সংগঠনকে বিক্রি করে দিতে পারে। এই সংগঠন প্রতিটি নেতাকর্মীর। সংগঠনে কোনো ধরনের কালিমা লেপন করতে দেয়া হবে না। যার যার জায়গা থেকে স্বচ্ছ এবং সহনশীল আচরণ করতে হবে।’
বৈঠক সূত্র জানায়, চলমান অচলাবস্থার স্থায়ী সমাধানের জন্য গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য তিন কেন্দ্রীয় নেতা মিয়া মশিউজ্জামান, আতাউল্লাহ এবং তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, আজকের মধ্যেই ড. রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করে জরুরী সভায় বসবে গণঅধিকার পরিষদ। সেই সভায় ঐক্যবদ্ধভাবে চলার চূড়ান্ত বার্তা দেবে সংগঠনটি।
এসব বিষয় জানতে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ এক ও অভিন্নভাবেই চলবে। ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলেও তা ক্ষণস্থায়ী। আমাদের বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বা কালকের মধ্যে চূড়ান্ত সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
মন্তব্য করুন