যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের সাথে আমার বাংলাদেশ পার্টি ‘এবি পার্টি’র এক মতবিনিময় সভা আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭ টায় ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট এর যৌথ উদ্যোগে ছয় সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল এই মতবিনিময়ের জন্য আজ এবি পার্টি সহ বাংলাদেশের ৪ টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানায়। এবি পার্টির পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে মতামত ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব ও কূটনৈতিক টিমের প্রধান ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
এবি পার্টি নেতা প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনকে বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১১ টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭টি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য। বাকী ৪টি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল
তুলনামূলকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য। আজ এটা সর্বসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। দেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী প্রস্তুতির অবস্থা এবং পরিস্থিতির একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করার জন্য মার্কিন পর্যবেক্ষক দল বর্তমানে ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
পর্যবেক্ষক দলে ক্লিনটন প্রশাসনের অধীনে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ ইন্ডারফার্থসহ আছেন ছয়জন আন্তর্জাতিক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তারা হলেন; সাবেক ডেপুটি ইউএসএআইডি প্রশাসক বনি গ্লিক, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রশাসনের সাবেক সহকারী উপদেষ্টা জামিল জাফর, এনডিআই এর এশিয়া-প্যাসিফিকের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ এবং আইআরআই’র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও।
মতবিনময়কালে এনডিআই’র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রোগ্রাম পরিচালক জ্যামি স্যাক্স স্পাইকারম্যান, আইআরআই বাংলাদেশের রেসিডেন্ট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ক্রেগ হলস্টেড জে ডি উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ পর্যবেক্ষক টিমকে আরও বলেন, ১২ কোটিরও বেশী ভোটারদের জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা একটি বিশাল কাজ যা পুরো নির্বাহী এবং জনপ্রশাসনের সম্পূর্ণ নিযুক্তি ছাড়া পরিচালনা করা সম্ভব না। জনপ্রশাসনের এই পুরো টিম থাকে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। ভোট গ্রহণ, গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করে মাঠে নিয়োজিত প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারা ইচ্ছেমত নির্বাচন অনিয়ম ও কারচুপি করে থাকে। দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন একা কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন “গণতন্ত্র চর্চায় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন, এর মাধ্যমেই জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে, গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। একই প্রক্রিয়ায় এর বিপরীত পরিণতিও যে ঘটে তা ২০১৪ ও ২০১৮-তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটা ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দেশ ক্রমশ কর্তৃত্ববাদের দিকে অধঃপতিত হতে পারে, কঠিন ও দূর্গম হয়ে উঠতে পারে ফ্যাসিবাদ। বাংলাদেশ তেমন আরেকটি ভয়ংকর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সবচেয়ে জনপ্রিয়তা প্রস্তাব হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন ঘটিয়ে তার অধীনে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। চলমান আওয়ামী শাসন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিসমূহ এই দাবীতে অটল। আর ‘অপহৃত নির্বাচনের’ মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া বর্তমান সরকার তা মানতে নারাজ!
এমন সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকলে ২০২৪ সালের শুরু থেকে পশ্চিমা বিশ্বের বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে বাংলাদেশের পড়ার আশংকা বা ঝুঁকি তৈরী হয়েছে। এটা কোন দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাম্য নয়, বরং অসন্মানজনক। এতে মানুষের জীবন-জীবিকা, দেশের অর্থনীতি ও সমাজ সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে! ১২তম জাতীয় নির্বাচন ত্রিপক্ষীয় অনুদার আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধে ইন্দো-প্যাসিফিকের নিয়ম ভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রতি আমাদের আন্তর্জাতিক সারিবদ্ধতার কারণে আরও বেশি চাপ হয়ে উঠেছে। আগামী ৫০ বছরের জন্য আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য আগামী নির্বাচন সেজন্য সকলের জন্য জরুরী।
মন্তব্য করুন