বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কিছু হলে লাখো-কোটি জনগণের হৃদয়ের আগুনে সরকার পুড়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার্থে বিদেশে নিতে পরিবারের আবেদন আইন মন্ত্রণালয় নাকচ করে দেওয়ার পর আজ রোববার (১ অক্টোবর) রাতে কিশোরগঞ্জের লতিফাবাদ চক্ষু হাসপাতাল মাঠে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নজরুল ইসলাম বলেন, শর্ত যদি শিথিল করা হয়, তাহলেই বেগম জিয়া বিদেশে যেতে পারেন। কিন্তু তারা (সরকার) সেটা করবে না, করতে চায় না। তারা ভয় পায়, তারা ভয় পায় খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা নিয়ে। কিন্তু আমরা বলি, ভয় তো কিছু নাই। বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা হৃদয়ে ধারণ করি। বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার লাখো-কোটি সন্তান আছে। তিনি আমাদের শুধু নেত্রী নন, তিনি আমাদের মা। এই যে লাখো-কোটি সন্তানের মা, খোদা না করুক- কোনো কারণে তার যদি কোনো ক্ষতি হয়, এসব সন্তানের হৃদয়ে যে আগুন জ্বলবে- সেই আগুনে এই সরকার পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অনুরোধ করবো তাই, দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। খালেদা জিয়া পালিয়ে যাওয়ার মানুষ না। যে দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব সেখানে চিকিৎসা করিয়ে আবার তিনি দেশে ফিরে আসবেন। তখন রেখে দিয়েন, আপনারা সরকারে থাকেন, তাকে জেলখানায় রাখেন, কোনো অসুবিধা নেই।
কোনো আসামিকে বিদেশে চিকিৎসায় পাঠানোর নজির নেই- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য খণ্ডন করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম জাসদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবকে দণ্ডপ্রাপ্ত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের এমপি হাজি সেলিম, তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন, বিদেশে গেলেন আবার ফিরে আসলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোভিডের আগে আমরা যখন দেশনেত্রীর মুক্তি চাই, তখন আমাদের এই আইনমন্ত্রী বলেন যে- তাকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। আদালতে আপনারা যান। এর কয়দিন পরে দেখলাম- সরকারি আদেশে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত হলো, উনি বাসায় আসলেন। তার মানে- আইনমন্ত্রী বেআইনি কথা বলেছেন, মিছা কথা বলেছেন। উনি বেআইনি মন্ত্রী হয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, এবারও একই রকম। এবারও বলছেন, সরকারের কিছু করার নেই। আদালতে যেতে হবে। অথচ আইন বলে যে, সরকার যে কোনো সময়ে কোনো শর্ত দিয়ে কিংবা শর্ত ছাড়া যে কোনো দণ্ডিত ব্যক্তিকে দণ্ড স্থগিত করে বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারে। এই যে ক্ষমতা সরকারের সেই ক্ষমতাবলেই বেগম জিয়াকে দুইটা শর্ত দিয়ে বাসায় থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেই বিদেশে যাওয়ার ওপর শর্ত তুলে নিলেই উনি বিদেশে যেতে পারেন। আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বাকশালের মোড়কে এই সরকার, যে সরকার মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করেনি, যে সরকার মানবাধিকারে বিশ্বাস করেনি, যে সরকার সংবিধানে কোনোদিন বিশ্বাস করেনি, যে সরকার ভোটের অধিকারে কোনোদিন বিশ্বাস করে না- সেই সরকার বাংলাদেশ থেকে বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের এই শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক কর্মসূচি চলতেই থাকবে। আমরা ঘরে ফিরে যাব না।
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে সরকার তাকে বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সরকার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির ‘একদফা’ দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের ত্রিশালের বগার বাজার থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিলেট বিভাগ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিভাগ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগের রোডমার্চ হয়। এটি বিএনপির চতুর্থ রোডমার্চ।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে এবং জেলার সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা ওয়ারেছ আলী মামুন, আবদুল বারী ড্যানি, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন