আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞায় নিজের নাম থাকার কথা শুনেছেন বলে জানান জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি ও দলটির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। তবে দু ঘণ্টা পেরোতেই নিজের অবস্থান পাল্টে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েননি তিনি।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় আসতে ভিসা নিধেষাজ্ঞায় পড়ার দাবি করেছিলেন রাঙ্গা। নির্বাচনের আগে আলোচনায় থাকতে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার দাবি করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রংপুর-১ আসনের এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজনীতি করি, শত্রু মিত্র আছে। অনেকে অনেক কথা বলতে পারে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ায় দেশের রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্যসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন, আলোচনা। বাতাসে ভাসছে নানা কথা। অনেকের নাম আসছে আলোচনায়। সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলের রাজনীতিবিদরাও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়েছে। তবে কারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন তা প্রকাশ করেনি দেশটি। যার ভিসা বাতিল হবে, শুধু তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এরপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়ার বিষয়টি কিভাবে জানলেন জানতে চাইলে রাঙ্গা দাবি করেন, কয়েকজন সাংবাদিক তাকে জানিয়েছে। ফেসবুকেও দেখেছেন। তিনি বলেন, আসলেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা জানি না। আমি সাংবাদিকদের বলেছি, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকলে অখুশি নই।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়ার পর মসিউর রহমান রাঙ্গা পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী থাকাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ বছর মেয়াদি ভিসা পেয়েছিলেন। সেই ভিসার মেয়াদ এখনো আছে কি না জানেন না তিনি।
ভিসা বাতিল হলে মার্কিন দূতাবাস চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেবে। এমন কোনো চিঠি পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিঠি পেলে সংবাদ সম্মেলন করে জানাব।
এর আগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অখুশি না। আমি শুনেছি আমাকেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমার আমেরিকার দশ বছরের ভিসা আছে। আমার এখন যাওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই, সুযোগও নাই। সামনে নির্বাচন। গত পাঁচ বছরেও আমেরিকা যাইনি।
ভিসানীতির বিষয়ে রাঙ্গা বলেন, এটা আমেরিকার নিজস্ব বিষয়। আমার দেশে যদি কাউকে আসতে না দেই, যদি মনে করি এই লোকগুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর তাহলে বলার কিছু নাই। আমি মনে করি এটা দেশের জন্য ভালো। আমি এটাকে ভালোই বলছি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এটার প্রভাব পড়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করায় আমি মোটেও অখুশি নই। তালিকায় আমার নাম থাকলে অসন্তুষ্ট না। এটি একটি দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়। তারা প্রয়োজন মনে করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনেক দেশ আছে। আমেরিকাই যেতে হবে বিষয়টি এমন নয়। তাছাড়া ভিসানীতির কারণে দেশের খুব ক্ষতি হবে, আমি তা মনে করি না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই তালিকায় রয়েছেন- আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্য। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।
মন্তব্য করুন