গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটের পক্ষে রয়েছে বলে দাবি করেছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ।
মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গত বুধবার বলা হয়েছে- বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তায় সমর্থন করে। আমরাও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, জনগণের ভোটাধিকার চাই। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পক্ষে আছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একদফার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে গণমিছিলপূর্ব এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তিনি রাজনীতি করেন না, একবার এসেছিলেন কিন্তু তিনি স্টে করেননি। কিন্তু ড. ইউনূসকে নিয়ে সরকারের বেশি মাথা ব্যথা। আমরা এই সরকারের শঠতা, জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা প্রতিহত করবো। যেকোনো মূল্যে আমরা একতরফা নির্বাচন বন্ধ করব।
সরকারপ্রধানের উদ্দেশে জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, তালবাহানা করে লাভ নেই, নির্বাচন আপনি করতে পারবেন না। সারা পৃথিবী বলছে- বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। আমরাও তাই চাই। সুতরাং চলে আপনাকে যেতে হবেই। না গেলে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে। এটা ১৮ কোটি মানুষের লড়াই, এটা ভাত-কাপড়ের লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, বর্তমান সরকার আবারো একতরফা নির্বাচন করতে চায়। তারা যতই চেষ্টাই করুক, বাংলার মানুষ আর একতরফা প্রহসনের কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। আমরা জীবন দিয়ে হলেও একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করব।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা যখন আন্দোলন করছি- তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিদেশ থেকে ফিরে এসে আবার দিল্লিতে উড়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির সাথে মিটিং করলেন। কিন্তু কোনো সংবাদ মাধ্যম কোনোকিছু প্রকাশ করতে পারলো না। কী পেলাম আমরা, শুধুমাত্র একটি সেলফি (ছবি)। বর্তমানে বাজারে আগুন লেগেছে। এখন সরকার প্রতিপক্ষ বানিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। এবারের লড়াইটা কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়, ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লড়াই।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা নিয়মিত সভা করছি, মিছিল করছি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য। যারা রাজনৈতিকভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করে বিরোধী দলকে আটকে রাখতে চায়- আমাদের লাড়াই তাদের বিরুদ্ধে। সরকার একতরফা নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে এবং বলছে- সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, যেটা হাস্যকর। তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর যে অবস্থা তৈরি করা হয়েছে তা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। পরিকল্পিতভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, আমরা এই সরকারের পদত্যাগ ও সংবিধান সংস্কারের ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছি। আগামী দুই মাস হোক বা চার মাস হোক, আগামীর বাংলাদেশে আপনারা নেই। আগামীর বাংলাদেশ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আর পরিচালিত হবে না।
আসম রবের সভাপতিত্বে এবং জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সঞ্চালনায় এতে ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মন্তব্য করুন