বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে চান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সংকট শুধু বিএনপির বিষয় নয় অথবা গণতন্ত্র মঞ্চ কিংবা গণঅধিকার পরিষদের বিষয় নয়। এটা আজকে সমগ্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর চেয়ে বড় সংকট আগে কখনো আসেনি। আমি কথা বলতে পারব না, বিচার পাব না, সিকিউরিটি পাব না, স্বাস্থ্যসেবা পাব না, শিক্ষা পাব না- এটা হতে পারে না। তাই সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে আমাদের আবেদন- বাংলাদেশের মানুষকে তার গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে তাদের পাশে দাঁড়ান।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এক সেমিনারে এই আহ্বান জানান ফখরুল।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জাতিগত ও নাগরিকত্বের পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। বিএনপির উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কৌশল’-শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকাটি পরিষ্কার করে বলেছে- ধীরে ধীরে গোপনে নীরবে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মিলিয়স অব পিপল। এটাই সত্য। আজকে এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। আবারও সকলকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করি, বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করি, মুক্ত একটা সমাজ গড়ে তুলি, মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি।
তিনি বলেন, বিরোধীদলের ৪ মিলিয়ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, নির্যাতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত, মিথ্যা মামলা হচ্ছে। এ রকম একটা প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে আদালত-প্রশাসন বলতে কিছু নেই। যে প্রশাসন আছে তা শুধু ক্ষমতাসীনদের জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য প্রায় ১৬০ জন আন্তর্জাতিক বিশ্বনেতা যে বিবৃতি দিয়েছেন সেই বিবৃতির বিপক্ষে শনিবার দেশের ৫০ জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছেন। একজন সাংবাদিক বললেন- এটা ফেইক, এটাতে অধিকাংশই সই করেনি। এখন তারা কথা বলতে পারছেন না এজন্য, কথা বললে আবার তারা নির্যাতনে পড়বেন। সরকার সমস্ত জাতিটাকে একটা ভয়ের আস্তরের মধ্যে রেখেছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের ছয় বছর হয়ে গেছে। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে উগ্রবাদ দানা বাঁধছে, বন্দুক যুদ্ধ হচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য শুধু নয়, আন্তর্জাতিক কমিউনিটির জন্যও অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। এ বিষয়গুলো আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই সরকারের জনগণের সমর্থন না থাকায় এই ইস্যুতে তারা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে দাঁড়াতে পারে না, তাদের কনভিন্স করতে পারে না- আমরা এই ইস্যুর সমাধান করতে চাই, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে এবং তাদের অধিকার-সম্মান দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। সেজন্য আমরা চাই, আন্দোলনে এই সরকারকে সরিয়ে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির ড. জাহেদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির শামসুল আলম, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মণ্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক তাজমেরি এস এ ইসলাম, এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান, শাহজাহান চৌধুরী, নজির হোসেন, জহিরউদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ সেমিনারে ছিলেন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, কানাডা, ইরান, নেদারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি, ইউএসএইডসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন